[লেখক-পরিচিতিঃ কাজী মোতাহার হোসেনের জন্ম ১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দের ৩০এ জুলাই কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালি উপজেলার লক্ষ্মীপুরে। তার পৈতৃক নিবাস ছিল বৃহত্তর ফরিদপুরের রাজবাড়ি জেলার পাংশা উপজেলার বাগমারা গ্রামে। তাঁর পিতার নাম কাজী গওহর উদ্দীন আহমদ, মায়ের নাম তসিরুন্নেসা। পদার্থবিজ্ঞানের কৃতী ছাত্র মোতাহার হোসেন কর্মজীবনে অধ্যাপনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৭৫ সালে জাতীয় অধ্যাপক পদে ভূষিত হওয়া প্রথম তিনজনের অন্যতম ছিলেন তিনি। বিশ ও ত্রিশের দশকে ঢাকায় বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন’ নামে পরিচিত সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের তিনি ছিলেন অন্যতম সংগঠক এবং ওই আন্দোলনের মুখপত্র বিখ্যাত ‘শিখা পত্রিকার অন্যতম সম্পাদক। মননশীল লেখক কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন একাধারে বিজ্ঞানী ও সাহিত্যিক। তিনি বিজ্ঞান, ধর্ম, ইতিহাস, সাহিত্য, সংগীত ইত্যাদি নিয়ে অনেক তথ্যসমৃদ্ধ মননশীল প্রবন্ধ লিখেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হচ্ছে- প্রবন্ধ সংকলন: “সঞ্চয়ন ও ‘নির্বাচিত প্রবন্ধ'; সমালোচনাগ্রন্থ : 'নজরুল কাব্য পরিচিতি'; পাঠ্য বিজ্ঞানগ্রন্থ: ‘গণিত শাস্ত্রের ইতিহাস', 'আলোক বিজ্ঞান ইত্যাদি। যুক্তিশীলতা ও স্বচ্ছতা কাজী মোতাহার হোসেনের গদ্যরচনার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। কাজী মোতাহার হোসেন ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দের ৯ই অক্টোবর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।]
গল্পঃ
ভুলের মূল্য
ভুলের মূল্য
চিন্তা-ভাবনা এবং কার্যকলাপে ভুল করা মানুষের পক্ষে শুধু স্বাভাবিক তাই নয়, অপরিহার্যও বটে। স্বাভাবিক এইজন্য যে মানুষ বড় দুর্বল, সর্বদা নানা ঘটনা ও পারিপার্শ্বিক অবস্থার সাথে সংগ্রামে জয়ী হতে পারে না। অপরিহার্য এইজন্য যে তার জ্ঞান অতি সংকীর্ণ, কোনটি ভুল, কোনটি নির্ভুল তা নির্ধারণ করাই অনেক সময় কঠিন, এমনকি অসম্ভব হয়ে পড়ে।
এখানে কেবল যে দুর্বলচেতা ও স্বল্পজ্ঞান মানুষের কথা বলছি তা নয়। এ মন্তব্য সবল-দুর্বল এবং অজ্ঞ-বিজ্ঞ-নির্বিশেষে সকলের পক্ষেই খাটে। প্রতারক, দস্যু, মাতাল, ঘোড়দৌড়ের খেলোয়াড় প্রত্যেকেই জানে যে তার কাজ ঠিক হচ্ছে না-সে ভুল পথে চলেছে। কিন্তু সে পথ হতে ফিরবার ক্ষমতা তার কোথায়? তার বিবেক হয়ত দংশন করছে, কিন্তু প্রবৃত্তি বশ মানছে না। এইরূপে ক্রমে ক্রমে বিবেক-বুদ্ধিই শিথিল অথবা শক্তিহীন হয়ে যাচ্ছে।
এইচএসসি (HSC) বোর্ড পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতির জন্য পড়ুন সৃজনশীল এবং বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তরসহ:
অন্য কথায়, সে নিজের কাজের সমর্থক যুক্তি বের করে বিবেকের উগ্রতাকে প্রশমিত করে নিচ্ছে। প্রবৃত্তির হাতে বিবেকের এই নিগ্রহই মানুষের দুর্বলতার প্রধান পরিচয়। তাছাড়া মানুষ এমন সব ঘটনার ঘূর্ণিপাকে পড়ে যায় যে, তাকে বাধ্য হয়ে খেলার পুতুলের মতো নিরুপায়ভাবে একটার পর আর একটা ভুল করে যেতে হয়, একটা ভুল ঢাকতে গিয়ে আরও দশটার আশ্রয় নিতে হয়। মানুষ বড় জটিল জীব। তাকে দশ দিক বজায় রেখে কাজ করতে হয়।
আবার পৃথিবীও এমন কঠিন ঠাই যে, অনেক সময় এক কুল বজায় রাখতে গেলে আর-এক কুলে ভাঙন লাগে। জীবনে এইগুলোই সবচেয়ে বড় সমস্যা, এইখানেই ভুল হয় বেশি। আবার এখানেই মানুষের বিশেষত্বও ফুটে ওঠে অপূর্বভাবে। এইরূপ নানা বিচিত্র ঘটনাবর্তের ভেতর দিয়ে মানুষকে পরীক্ষা দিতে দিতে যেতে হয় বলেই তার শ্রেষ্ঠত্ব, আর এই আত্ম-বৈশিষ্ট্য ফুটিয়ে তুলবার মধ্যেই তার সৌন্দর্যের বিকাশ এবং যোগ্যতার পরিচয়। পর্বেই বলেছি মানুষের জ্ঞান অতি সংকীর্ণ।
লেখকঃ কাজী মোতাহার হোসেন |
ক্রমান্বয়ে নতুন নতুন জ্ঞানভাপর খুলে যাচ্ছে আর পরনো জ্ঞানের অসম্পূর্ণতা চোখে পড়ছে। ইতিহাস, বিজ্ঞান, কাব্য, দর্শন, রাজনীতি, ধর্মনীতি, ব্যবহারিক জ্ঞান, কলা-বিদ্যা প্রভৃতি সমুদয় ক্ষেত্রেই এর এত অধিক দৃষ্টান্ত বর্তমান যে, তার উদাহরণ দেওয়া বাহুল্য মাত্র। এর থেকে বোঝা যায়, আজ যেটি সত্য এবং নির্ভুল মনে হচ্ছে, ভবিষ্যতে সেটি হয়ত মিথ্যা অথবা আংশিক সত্য বলে প্রমাণিত হতে পারে।
এজন্য আমরা আজকাল যে আদর্শ ধরে চলছি, তা নিয়ে অতিরিক্ত উল্লাসের সাথে আস্ফালন করতে পারিনে—যেহেতু, আমাদের আজকার উদ্ধত অহংকার কালকার দীন লজ্জায় পরিণত হতে পারে। মানুষের প্রকৃত যে জ্ঞান, তা ইন্দ্রিয়ের দ্বার দিয়ে অর্থাৎ অভিজ্ঞতার ভিতর দিয়েই আসে। শিশুকে আগুনের শিখা, ছুরির ধার, মরিচের ঝাল, এসব থেকে বাঁচিয়ে রাখা যায় না। যদি তা পারা যেত, তবে বোধ হয়, সে চিরকাল শিশুই থাকত।
শিশুর পক্ষে যা, পরিণত মানুষের পক্ষেও কতকটা তাই সত্য। প্রত্যক্ষ জ্ঞানের যেখানে অভাব, সেখানে সমস্ত জ্ঞানই অসম্পূর্ণ থেকে যায়। যে কোনো দিন পথ ভোলার কষ্ট ভোগ করে নাই, সে কখনো ঠিক পথে চলার আনন্দ উপভোগ করতে পারে না; যে কোনো দিন পানিতে পড়ে হাবুডুবু না খেয়েছে, সে কখনো নিরাপদে নৌকায় চড়ার সুখ ভালো করে বুঝতে পারে না।। মানুষ ভুল করে, পরে সেই ভুল সংশোধন করেই সত্যের সন্ধান পায়। সাধারণের ধারণা, ঠেকে শেখার চেয়ে দেখে শেখাই বুদ্ধিমানের কাজ। কিন্তু অতি বুদ্ধির গলায় দড়ি বলেও একটা কথা আছে। নিরুদ্বেগ আপদহীনতার ভেতরেই অনেক সময়ে বিপদের বীজ প্রচ্ছন্ন থাকে। আসল কথা, জীবনের অভিজ্ঞতা ও গভীর অনুভূতিলব্ধ যে জ্ঞান ও শিক্ষা, বাস্তবিকই তার তুলনা নাই।
স্বল্প পরিসর টবের ভেতরে জীবন ধারণ করার চেয়ে, বাইরের বিস্তৃতির ভেতরে আনন্দে বিকশিত হওয়া অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর। তবে অন্যের দুর্দশা দেখেও অবশ্য শিক্ষা লাভ করতে হবে। কারণ একজনের পক্ষে সকল রকম অভিজ্ঞতা লাভ করা অসম্ভব। আমাদের এই বর্তমান কোটি কোটি অভিজ্ঞতারই ফল, সুতরাং জীবন-যাত্রায় অন্যের অভিজ্ঞতারও যে প্রয়োজন আছে, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নাই। অন্যের নিকট থেকে পাওয়া অসম্পূর্ণ বা অপরীক্ষিত জ্ঞানকে নিজের অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যাচাই করে নিজস্ব করে নিতে হবে। স্বাস্থ্য ও পরিপুষ্ট জীবনের এই-ই ধারা।। মানুষ এইরকম ভুলের ওপর চরণ ফেলে ফেলে সত্যকে খুঁজে পাচ্ছে এবং এভাবেই ক্রমশ অগ্রসর হয়ে চলেছে। ভুল না করলে যেন সত্যের প্রকৃত রূপটি ধরা পড়ে না, এ যেন আলো-আঁধারের লুকোচুরি খেলা।
যেমন একটা ফুলকে নানাভাবে চারদিক থেকে দেখলে তার নতুন নতুন সৌন্দর্য চোখে পড়ে, এরূপ সত্যুকেও নানা ঘটনার ভেতরে দিয়ে নানাভাবে পরখ করে দেখতে হয়; তবেই তার সমগ্র রূপ ধরা পড়ে। কোনো বৃহৎ সত্যই এ পর্যন্ত সমগ্রভাবে আমাদের কাছে ধরা পড়েছে কিনা সন্দেহ। তবে যে-সত্যের যত বেশি ব্যতিক্রম আমাদের চোখে পড়েছে, তা আমরা ততই ভালো করে বুঝতে পেরেছি। দুঃখ যত প্রবলভাবে মানুষের মনে আঘাত করে, সুখ ততটা করে না। সুখকে কোনো কোনো লোকে যত নিহভাবে গ্রহণ করতে পারে, চেষ্টা করলেও দুঃখকে তত সহজে মনের গোপনে লুকিয়ে রাখতে পারে না। এজন্য জীবনে দুঃখের মূল্য বড় বেশি।
আগে দুঃখ পেতে হবে, তবেই সমস্ত অনুভূতি সজাগ ও তীক্ষ হবে। ভুল। করে যে দুঃখ পায়, তাহার ভুল করা সার্থক। আর ভুল করলেও যে নির্বিকার, আত্ম-বিচার যার নাই- তার কাছে সত্য-মিথ্যা, পাপ-পুণ্য, অর্থশূন্য শব্দ ছাড়া আর কিছুই নয়। ব্যক্তিগত জীবনে ভুলের সবচেয়ে বড় সার্থকতা এখানে যে, ভুল মানুষকে দুঃখ ও অনুশোচনার আগুনে পুড়িয়ে তাকে বিশুদ্ধ করে তোলে এবং মনুষ্যত্ব-সাধনের দিকে অনেক দূর অগ্রসর করে দেয়। ভুল সম্বন্ধে আর-একটা বড় কথা, এই যে ভুল না করলে বুঝি-বা লোকে প্রেমময় হতে পারে না। তার কারণ, প্রেমের মূল উৎস হচ্ছে সহানুভূতি।
নিজের ভুল করে যার অহংকার চূর্ণ হয়নি, সে মুখে যতই বলুক না কেন তার ব্যবহারের মধ্যে প্রায়ই প্রচ্ছন্নভাবে একটা আত্মম্ভরিতা এবং অন্যের প্রতি উপেক্ষা বা কৃপার ভাব থেকে যায়। আমার মনে হয়, এজন্য গোঁড়া নীতিবাগীশের দল অন্যের প্রতি অতি কঠোর বিচারের প্রয়োগ করেন এবং এ কারণেই তারা রীতিমতো সামাজিক হতে পারেন না। কিন্তু যখন বিচারের সেই নিষ্ঠুর মাপকাঠি দিয়ে নিজের (বা প্রিয়াস্পদের) জীবন যাচাই করে দেখবার সময় আসে, তখনই প্রথম চোখে পড়ে, ভুল করা কত স্বাভাবিক, কত অবশ্যম্ভাবী। তখন তার দৃষ্টি বদলে যায়, করুণায় প্রাণ-মন ভরে ওঠে; তখন তার কল্পনার মোহ ভেঙে যায়। তখনই সে প্রথম বুঝতে পারে, সে রক্তমাংসের মানুষ।
আত্মকৃত ভুল মানুষকে ঘৃণা থেকে নিবৃত্ত করে, প্রেমময় হতে শেখায়, সকল মানুষের সঙ্গে একটা আত্মীয়তা বোধ জন্মায়। একথা শুনতে অদ্ভুত লাগে বটে, কিন্তু এ সত্য। ভুলের মতো একটা সাধারণ ব্যাপার, যা অহরহ ঘটছে, তাই আবার মানুষের এতখানি কাজে লাগে, এটি বিশ্বের পক্ষে সামান্য সৌভাগ্যের বিষয় নয়। মানব সভ্যতার ইতিহাসে সত্যোদঘাটনের প্রচেষ্টার চেয়েও বোধ হয় ভুলের এই কার্যকারিতা বেশি কল্যাণপ্রসূ হয়েছে।
বাস্তবিক, ভুল আছে বলেই পৃথিবীটা এত সুন্দর। ভুল না থাকলে পৃথিবীর দয়া, মায়া, ক্ষমা, ভালোবাসা প্রভৃতি ও কোমল গুণগুলির এত অবকাশ ও বিকাশ হতো কিনা সন্দেহ। তাছাড়া ভুল না থাকলে এত দিন মানুষের সমস্ত প্রচেষ্টা এবং অগ্রগতি কবে রুদ্ধ হয়ে সমস্ত অসাড় নিস্পন্দ হয়ে যেত। এখানেই ভুলের মূল্য।
আরো পড়তে ক্লিক করুন:
শব্দার্থ ও টীকাঃ
পারিপার্শ্বিক - চতুর্দিকস্থ। পার্শ্ববর্তী।
দুর্বলচেতা - দুর্বল চিত্ত এমন।
অজ্ঞ-বিজ্ঞ-নির্বিশেষে - মূর্খ-জ্ঞানী সকলেই।
বিবেক - মানুষের অন্তর্নিহিত শক্তি; যার দ্বারা ন্যায়-অন্যায়, ভালোমন্দ, ধর্মাধর্ম বিচার করা যায়। ন্যায়-অন্যায় বোধ।
উগ্রতাকে প্রশমিত - রূঢ়তা বা তীব্রতাকে শান্ত বা নিবারণ করা।
প্রবৃত্তি - স্পৃহা। আকাক্সক্ষা। ইচ্ছা।
ঘূর্ণিপাক - বায়ু বা পানির প্রচ’ আবর্ত।
ঘটনাবর্ত - ঘটনার আবর্ত। ঘটনাবলি।
‘অতি বুদ্ধির গলায় দড়ি' - একটি প্রবাদ বাক্য। অতি চালাকের মন্দ পরিণতি বোঝাতে এটি ব্যবহৃত হয়।
পরিপুষ্ট - অতিশয় পুষ্ট। সুপুষ্ট।
নিস্পৃহভাবে - স্পৃহাহীনভাবে। কামনা-বাসনাহীনভাবে।
আত্মম্ভরিতা - অহংকার। দম্ভ।
গোড়া - ধর্মমতে অন্ধবিশ্বাসী ও একগুঁয়ে। অন্ধভক্ত।
নীতিবাগীশ - নীতি-নিষ্ঠা সম্পর্কে দাম্ভিক।
প্রিয়াস্পদ - প্রিয়ভাজন। প্রিয়পাত্র।
আত্মকৃত - নিজে সম্পাদিত। নিজের করা যা।
নিবৃত্ত - বিরত। ক্ষান্ত।
সত্যোঘাটন - সত্য + উদ্ঘাটন = সত্যোঘাটন। প্রকৃত সত্য খুঁজে বের করা।
কল্যাণপ্রসূ - কল্যাণ বা শুভকর এমন।
পাঠ-পরিচিতিঃ কাজী মোতাহার হোসেন রচিত 'ভুলের মূল্য' প্রবন্ধটি তাঁর রচনাবলির ১ম খণ্ড (১৯৮৪) থেকে সংকলিত। এই প্রবন্ধে লেখক মানবজীবনে ভুলের গুরুত্ব বহুমাত্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে উপস্থাপন করেছেন। মানবজাতির চিরন্তন আকাক্ষা সাফল্য লাভ। সেই পথ-পরিক্রমায় কর্ম ও চিন্তায় অজ্ঞ-বিজ্ঞ সকলেই কমবেশি ভুল করে থাকে। অনেক সময় প্রবৃত্তির তাড়নায়ও মানুষ ভুল পথে হাঁটে। লেখকের মতে, ভুল মানবজীবনের একটি স্বাভাবিক ঘটনা। পৃথিবীর বিচিত্র ঘটনাবর্ত অতিক্রমণে যোগ্যতা ও শ্রেষ্ঠত্বের পরিচয় দেওয়াই মানুষের বিশেষত্ব। ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে সংশোধিত হওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। ভুলের মধ্য দিয়েই মানুষ সত্যে পৌছে। আত্মকৃত ভুলের শিক্ষা মানুষকে দুঃখ ও অনুশোচনার আগুনে পুড়িয়ে খাঁটি করে। মানুষকে মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল ও প্রেমময় করে তোলে। মানবসভ্যতার ইতিহাসে ভুলের কার্যকারিতা সত্যোদৃঘাটনের শক্তির মতোই গুরুত্বপূর্ণ। এভাবে লেখকের কাছে মনে হয়েছে, ভুলই পৃথিবীর অগ্রযাত্রার অন্যতম চালিকা শক্তি। এ রচনায় লেখক জীবনের এক ধরনের দর্শনকেই যেন ব্যক্ত করেছেন।
বহুনির্বাচনি প্রশ্নঃ
১. মানুষের প্রকৃত জ্ঞান আসে কিসের মাধ্যমে?
ক. পড়াশোনার
খ. শিক্ষাগুরুর
গ. অভিজ্ঞতার
ঘ. ভ্রমণের
২. ভুল না করলে যেন সত্যের প্রকৃত রূপটি ধরা পড়ে না। কারণ—
ক, মানুষের স্বভাব ভুল করা।
খ. সত্যের পূর্বশর্ত হলো ভুল করা
গ, ভুল মানুষকে পরিশুদ্ধি দান করে
ঘ. ভুলের মাধ্যমে মানুষ সত্যের সন্ধান পায়।
নিচের কবিতাংশটি পড়ে ৩ ও ৪ সংখ্যক প্রশ্নের উত্তর দাও।
পাপে পুণ্যে সুখে দুখে পতনে উত্থানে,
মানুষ হইতে দাও তোমার সন্তানে।
৩. পঙক্তিদ্বয়ের বক্তব্য “ভুলের মূল্য প্রবন্ধের যে যে বাক্যকে সমর্থন করে তা হলো-
i. ভুল না করলে সত্যের প্রকৃত রূপটি ধরা পড়ে না।
ii. অভিজ্ঞতার ভিতর দিয়ে প্রকৃত জ্ঞান আসে
iii. ভুল আছে বলে পৃথিবীটা এত সুন্দর
নিচের কোনটি ঠিক?
ক. i ও ii
খ. ii ও iii
গ. i ও iii
ঘ.i, ii ও ii
৪. উক্ত বিবরণের প্রেক্ষিতে শিক্ষণীয় বিষয় কোনটি?
ক, জীবনে পদে পদে ভুল করা।
খ. ভুল থেকে সংশোধিত হওয়া
গ. মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া
ঘ. ঠেকে না শিখে দেখে শেখ
এইচএসসি (HSC) বোর্ড পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতির জন্য পড়ুন সৃজনশীল এবং বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তরসহ:
সৃজনশীল প্রশ্নঃ
i. নাসির সাহেবের স্ত্রী সবকিছুতে শুরুতেই নেতিবাচক ধারণা পোষণ করেন। ছেলে-মেয়েদের কোনো ভুল তিনি সহজভাবে মেনে নিতে পারেন না। ফলে, তিনি যেমন কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না, তেমনি সন্তানেরাও সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগে।
ii. অফিস থেকে ফিরে নাসির সাহেব দেখলেন, তার স্ত্রী সন্তানদের বকাবকি করছেন নিশ্চয়ই তারা কোনো ভুল করেছে। তিনি স্ত্রীকে বললেন- ভুল করা খুব স্বাভাবিক বিষয়, একটি ভুল মানুষকে শত ভুল না করার শিক্ষা দেয়। ভুল করা ছাড়া মানুষ পরিশুদ্ধি লাভ করতে পারেন না, আর ভুল আছে বলেই পৃথিবীটা এত সুন্দর।
ক. ভালোবাসা বা প্রেমের মূল উৎস কী?
খ. লেখক ভুলকে একই সাথে স্বাভাবিক ও অপরিহার্য বলেছেন কেন?
গ. অনুচ্ছেদের দ্বিতীয় অংশে “ভুলের মূল্য প্রবন্ধের কোন দিকটি ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. নাসির সাহেবের স্ত্রীর মানসিকতা পরিবর্তনে “ভুলের মূল্য প্রবন্ধের বক্তব্য কতটুকু কার্যকর বলে তুমি মনে কর। মতের পক্ষে যুক্তি দাও।
0 Comments:
Post a Comment