বাংলা ১ম পত্র গাইড
কবিতা/পদ্য
মানুষ
কাজী নজরুল ইসলাম
SSC Bangla 1st Paper Kobita
Manush
Srijonshil
Question and Answer pdf download
১নং সৃজনশীল প্রশ্নঃ
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
আজম সাহেব কুসুমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড়ে এলাকার ব্যাপক ক্ষতি হলে জেলা প্রশাসন থেকে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য নানাবিধ ত্রাণসামগ্রী আসে। ত্রাণ সাহায্য নিতে আসা প্রত্যেককে আজম সাহেব নিজ হাতে ত্রাণসামগ্রী তুলে দেন। সবাই তাঁর প্রশংসা করতে করতে খুশি মনে বাড়ি ফেরেন।
ক. মুসাফির কতদিন ভুখা ছিল?
খ. ‘মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান’ - কেন?
গ. আজম সাহেব ‘মানুষ’ কবিতায় বর্ণিত যে চরিত্রের বিপরীত সত্তা তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘মানুষ’ কবিতায় বর্ণিত ভণ্ডদের মানসিকতা পরিবর্তনে আজম সাহেবের মতো ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম- মতামতটি বিশ্লেষণ করো।
১ এর ক নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ মুসাফির সাত দিন ভুখা ছিল।
১ এর খ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ মানবতার কল্যাণ করাই হচ্ছে মনুষ্যত্বের ধর্ম। এ কারণেই কথাটি বলা হয়েছে।
✍ মানুষকে অবহেলা, অবজ্ঞা করে কোনো সামাজিক কল্যাণ প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। কেননা মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। মানুষকে ভালোবাসলে সমাজে শান্তি-স¤প্রীতি বিরাজ করে। পৃথিবীর অধিবাসীদের প্রতি সদয় হলেই ঊর্ধ্বলোকের প্রভু সদয় হবেন। তাই বলা হয়েছে ‘মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান’।
১ এর গ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ উদ্দীপকের পরোপকারী আজম সাহেব। অন্যদিকে ‘মানুষ’ কবিতার স্বার্থপর মোল্লা সাহেব চরিত্রের বিপরীত।
✍ ‘মানুষ’ কবিতায় মোল্লা সাহেব মসজিদের অঢেল গোশত-রুটি বেঁচে যাওয়ায় প্রচণ্ড খুশি হন। তখন এক রুগ্ণ ভুখারি খাবার চাইলে মোল্লা নামাজ না পড়ার দোহাই দিয়ে নিষ্ঠুরতার সাথে গালমন্দ করে তাকে তাড়িয়ে দেন। একজন ভুখারি যখন ক্ষুধার জ্বালায় জর্জরিত তখন মোল্লা সাহেব গোশত-রুটি নিয়ে মসজিদে তালা দিয়ে দিয়েছে। এই অমানবিকতার বিরুদ্ধে কবি নজরুল সোচ্চার প্রতিবাদ করেছেন ‘মানুষ’ কবিতায়। মোল্লা সাহেব চরিত্রটির মাধ্যমে তিনি স্বার্থমগ্ন ভণ্ড মানুষদের মুখোশ উম্মোচন করেছেন।
✍ উদ্দীপকের আজম সাহেব একজন ইউপি চেয়ারম্যান, যিনি ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসেন। অসহায় মানুষের কাছে নিজ হাতে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেন। তাঁর এই মহানুভবতায় সকলেই খুশি হন এবং তাঁর প্রশংসা করতে থাকেন। কাজেই উদ্দীপকের আজম সাহেব ‘মানুষ’ কবিতায় মোল্লা সাহেব চরিত্রের বিপরীত। একজন পরোপকারী মহৎ হৃদয়ের, অন্যজন স্বার্থপর পাষণ্ড হৃদয়ের।
১ এর ঘ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ ‘মানুষ’ কবিতায় বর্ণিত ভণ্ডদের মানসিকতা পরিবর্তনে আজম সাহেবের মতো ব্যক্তিদের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অপরিসীম। কারণ তাঁরাই সমাজে মনুষ্যত্বের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।
✍ ‘মানুষ’ কবিতায় ধর্মের আড়ালে কিছু মানুষের স্বার্থসিদ্ধির বিষয়টি উন্মোচিত হয়েছে। পূজারী তার ধর্মের লেবাস ধরে নিজের আখের গোছাতে ব্যস্ত। অসহায় ক্ষুধার্ত মানুষের কথা ভাবার সময় তার নেই। সে ভুখারির সামনে মন্দিরের দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। আবার মসজিদের মোল্লা সাহেবও স্বার্থপরতার চরম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। অনাহারক্লিষ্ট একজন মানুষকে এক টুকরো রুটি না দিয়ে সে গোশত-রুটি নিয়ে মসজিদে তালা দিয়ে দিয়েছে। যেখানে ধর্মের চর্চা হয়, মানবিকতার চর্চা হয় সেখানে বসে তারা ব্যক্তিগত সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের কথা ভেবেছে।
✍ আজম সাহেব ঘূর্ণিদুর্গত এলাকার অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তিনি ভেবেছেন স্বার্থপরের মতো নিজ সুখ-সমৃদ্ধি নিয়ে ব্যস্ত থাকা কোনো বিবেকবান মানুষের কাজ হতে পারে না। তাই তিনি ত্রাণ-সামগ্রী নিয়ে দ্রæত পৌঁছে গেছেন অসহায় মানুষের সাহায্যার্থে। এভাবে মানুষ যদি মানুষের দুর্দিনে পাশে দাঁড়ায় তবে পৃথিবীটা একদিন শান্তিতে ভরে উঠবে।
✍ স্বার্থপরতাই পৃথিবীর সকল অশান্তির মূল। পৃথিবীতে যত ভাঙন, বিপর্যয়, যুদ্ধবিগ্রহ সবই স্বার্থপরতার জন্য। উদ্দীপকের আজম সাহেবদের ভূমিকা সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। আজম সাহেব তাঁর কাজের মাধ্যমে সমাজে সকলের কাছে প্রশংসিত হয়েছেন। কিন্তু ‘মানুষ’ কবিতায় বর্ণিত মোল্লা-পুরুত মানুষের ঘৃণা ছাড়া অন্য কিছু পাবে না। তারা যদি উদ্দীপকের আজম সাহেবের কর্মকাণ্ড দেখে তাহলে নিজেদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে লজ্জিত হবে। আজম সাহেবের মতো ব্যক্তিরা মানুষের জন্য কাজ করলে কবিতায় বর্ণিত মোল্লা-পুরুতের মতো সমাজের ভণ্ড প্রতারকরা একসময় কোণঠাসা ও অস্তিত্বহীন হয়ে পড়বে।
৯ম-১০ম শ্রেণিরবাংলা ১ম পত্র গাইডমানুষকবিতাসৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
SSC Bangla 1st PaperManushKobitaSrijonshilQuestion-Answer২নং সৃজনশীল প্রশ্নঃ
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
মতিন সাহেবের স্ত্রীর মৃত্যু উপলক্ষে কাঙালি ভোজের আয়োজন করেছেন। কাঙালিদের লাইন করে বসিয়ে প্যাকেট খাবার দিয়ে বিদায় করা হয়েছে। বাড়ির ভেতরে চলছে আত্মীয়-স্বজনের ভূরিভোজ। কয়েকজন কাঙালি খাবার না পেয়ে বাড়ির দরজায় খাবার চাইলে বাড়ির কেয়ারটেকার ধমক দিয়ে বের করে দেয়। এ দৃশ্য দেখে মতিন সাহেব বলেন, ওরাই আমার আসল অতিথি, ওদের তৃপ্ত করে খাইয়ে দাও।
ক. ‘মানুষ’ কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে? ১
খ. ‘ঐ মন্দির পূজারীর, হায় দেবতা, তোমার নয়।’- ভিখারি কেন এ কথা বলে? ২
গ. উদ্দীপকের কেয়ারটেকারের আচরণে ‘মানুষ’ কবিতার কোন বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে? ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. “মতিন সাহেবই ‘মানুষ’ কবিতার কাক্সিক্ষত মানুষ।”- উক্তিটির যথার্থতা বিচার করো। [য.বো. ১৫] ৪
২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ
ক. কাজী নজরুল ইসলামের ‘সাম্যবাদী’ কাব্যগ্রন্থ থেকে ‘মানুষ’ কবিতাটি সংকলিত।
খ. ঐ মন্দির পূজারীর, হায় দেবতা, তোমার নয়- চরণটিতে ধর্মের নামে স্বার্থপূজারিদের প্রকৃত রূপ উন্মোচিত করা হয়েছে।
✍ মন্দির হচ্ছে হিন্দু ধর্মের উপাসনার স্থান। সকলেই সেখানে ধর্ম-চর্চা করার অধিকার রাখে। কিন্তু ধর্মের নামে স্বার্থপূজারিদের দৌরাত্ম্যে মন্দিরগুলো কেবল পুরোহিতদের জন্য হয়ে উঠেছে। সেখানে মনুষ্যত্বের কোনো মূল্য নেই। তাই পুরোহিত কর্তৃক বিতাড়িত হয়ে অভুক্ত ভুখারি বলেছে- ‘ঐ মন্দির পূজারীর, হায় দেবতা, তোমার নয়।’
গ. উদ্দীপকের কেয়ারটেকারের আচরণে ‘মানুষ’ কবিতার মোল্লা সাহেবের অমানবিক আচরণের দিকটি প্রকাশ পেয়েছে।
✍ পৃথিবীতে নানা ধর্ম, বর্ণ ও গোত্রের মানুষ রয়েছে। অর্থ-সম্পদের মাপকাঠিতে এসব মানুষের ভেদাভেদ থাকলেও এই মানুষদের উঁচু-নীচু ভেদ করা উচিত নয়। কেননা ধনী-গরিব সকলেরই এক পরিচয় তারা মানুষ। কিন্তু আমাদের সমাজে এমন অনেকে রয়েছে যারা নিজেদের স্বার্থে মানুষের সাথে দুর্ব্যবহার করে। ‘মানুষ’ কবিতার মোল্লা সাহেব তেমনই এক চরিত্র।
✍ উদ্দীপকের কেয়ারটেকারের আচরণে মোল্লা সাহেবের মতো মানসিকতা লক্ষণীয়। সে কাঙালিভোজের অনুষ্ঠানে কয়েকজন কাঙালির সাথে দুর্ব্যবহার করে। তার এই আচরণ ‘মানুষ’ কবিতায় বর্ণিত মোল্লা সাহেবের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কেননা মোল্লা সাহেবও সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও মসজিদের অতিরিক্ত শিরনি ভুখারিকে না দিয়ে তার সাথে দুর্ব্যবহার করে। তার এ আচরণ অমানবিক এবং রূঢ়। তাই বলা, যায় উদ্দীপকের কেয়ারটেকারের মাঝে ‘মানুষ’ কবিতার মোল্লা সাহেবের অমানবিকতার দিকটি প্রকাশিত।
ঘ. উদ্দীপকের মতিন সাহেব যে মানবতাবোধের পরিচয় দিয়েছেন তাতে তাকে ‘মানুষ’ কবিতায় কবির কাক্সিক্ষত মানুষ বলা যায়।
✍ ‘মানুষ’ কবিতায় মানুষের জয়গান করা হয়েছে। মানুষের চেয়ে যে বড় কিছু হতে পারে না কবি কবিতার মাধ্যমে তা তুলে ধরতে চেয়েছেন। পৃথিবীতে নানা জাতি-ধর্মের মানুষ বাস করলেও মানুষে মানুষে ভেদাভেদ থাকা উচিত নয়। কেননা মানুষ মানুষের সাথে ভেদাভেদ ঘটালে সামাজিক শান্তি বিনষ্ট হয়। ফলে সমাজ থেকে মানবতা উঠে যায়। মানুষ মানুষের উপকারে না এলে সেই সমাজ সহজে উন্নতি লাভ করতে পারে না।
✍ উদ্দীপকে মতিন সাহেবের কর্মকাণ্ড একজন প্রকৃত মানুষের পরিচায়ক। তিনি মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ করেননি। কেয়ারটেকার কাঙালিদের সাথে দুর্ব্যবহার করলে তিনি তাদের বাধা দিয়েছেন। এতে তার মাঝে মনুষ্যত্বের প্রকাশ ঘটেছে।
✍ ‘মানুষ’ কবিতায় কবি সমাজে মতিন সাহেবের মতো লোকদের প্রয়োজনীয়তাই ব্যক্ত করেছেন। কেয়ারটেকারের মতো ভণ্ড দুয়ারিদের তিনি ধিক্কার জানিয়েছেন। প্রতিটি মানুষের নিজস্ব ধর্ম আছে। আর সেসব ধর্মও মানুষকে বড় করে দেখতে বলেছে। তাই কবি কবিতার মধ্যে মানুষকে বড় করে দেখার আহবান জানিয়েছেন। আর উদ্দীপকের মতিন সাহেব তেমনই একজন মানুষ। তাই “মতিন সাহেবই ‘মানুষ’ কবিতার কাক্সিক্ষত মানুষ।” প্রশ্নোক্ত এই উক্তিটি যথার্থ।
এসএসসি বোর্ড পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতির জন্য পড়ুন সৃজনশীল ও বহুনির্বাচনি প্রশ্ন-উত্তরসহ:
৯ম-১০ম শ্রেণিরবাংলা ১ম পত্র গাইডমানুষকবিতাসৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
SSC Bangla 1st PaperManushKobitaSrijonshilQuestion-Answer৩নং সৃজনশীল প্রশ্নঃ
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
যেখানেই রোগ, দুঃখ, দারিদ্র্য, অসহায়ত্ব সেখানেই মাদার তেরেসা সেবার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। সেবার ব্রত নিয়েই তিনি সারাটা জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন। মানবতাকে সবার ওপরে স্থান দিয়েছেন। মানুষকে ভালোবেসে তিনি নিজেও বিশ্বজুড়ে সবার পরম ভালোবাসার- পরম শ্রদ্ধার মানুষে পরিণত হয়েছেন।
ক. ‘মানুষ’ কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত? ১
খ. ‘ঐ মন্দির পূজারীর, হায় দেবতা, তোমার নয়!’- এ কথা বলা হয়েছে কেন? ২
গ. মাদার তেরেসা কোন দৃষ্টিকোণ থেকে পুরোহিতের বিপরীত তা বর্ণনা করো। ৩
ঘ. ‘মাদার তেরেসা যেন কবির আকাক্সক্ষার এক বাস্তব দৃষ্টান্ত’- ‘মানুষ’ কবিতার আলোকে বিশ্লেষণ করো। ৪
৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ
ক. কাজী নজরুল ইসলামের ‘সাম্যবাদী’ কাব্যগ্রন্থ থেকে ‘মানুষ’ কবিতাটি সংকলিত।
খ. ২নং সৃজনশীল প্রশ্নের খ নং উত্তর দেখ।
গ. মানুষের মূল্য বোঝার দিক থেকে উদ্দীপকে বর্ণিত মাদার তেরেসা ‘মানুষ’ কবিতায় উল্লিখিত পুরোহিতের বিপরীত।
✍ ‘মানুষ’ কবিতায় কবি কাজী নজরুল ইসলাম মানবতার জয়গান গেয়েছেন। কবিতায় সমাজের এক শ্রেণির ভণ্ডদের মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে, যারা স্রষ্টার সৃষ্টিকে যথাযোগ্য মর্যাদা দেয় না। এ কবিতায় বর্ণিত পুরোহিত ক্ষুধার্ত ভিখারিকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয়। তার স্বার্থসিদ্ধির স্বপ্নভঙ্গ হওয়ায় সে অসহায় মানুষের প্রতি চরম অবজ্ঞা প্রকাশ করে।
✍ উদ্দীপকে উল্লিখিত মাদার তেরেসা এক মহীয়সী নারী। মানব-সেবায় তিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করেন। মানবতাই তাঁর সেবাধর্মের মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল। উদ্দীপকের মানবতাবাদী, নিঃস্বার্থ মাদার তেরেসার বিপরীতে ‘মানুষ’ কবিতার পুরোহিত চরিত্রটিকে মানবিক বোধহীন ও স্বার্থপর বলা যায়।
ঘ. ‘মানুষ’ কবিতায় কবি নজরুল মানুষকে বড় করে দেখার আহবান জানিয়েছেন। উদ্দীপকে উল্লিখিত মাদার তেরেসার মানবসেবামূলক কর্মকাণ্ডে কবির সেই আহবানেরই প্রতিচ্ছবি দেখা যায়।
✍ বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের সাম্যবাদী চেতনার প্রতিফলন ঘটেছে তাঁর রচিত ‘মানুষ’ কবিতায়। মানুষের চেয়ে বড় কিছু নেই। এটিই এই কবিতার মূলবাণী। কবি এমন সমাজের প্রত্যাশা করেন যেখানে মানুষ ভিন্ন মানুষের অন্য কোনো পরিচয় থাকবে না।
✍ উদ্দীপকে বর্ণিত হয়েছে মাদার তেরেসার অসামান্য মানব দরদের কথা। বিশ্বজুড়ে বিপন্ন মানুষের জন্য তিনি যেন ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। মানবসেবার ব্রত নিয়েই কাটিয়ে দিয়েছেন নিজের জীবনের পুরোটা সময়। মানুষকে ভালোবাসার যে আহবান ‘মানুষ’ কবিতায় কবি নজরুল জানিয়েছেন সেই আহবান নিজের কাজের মাধ্যমে করে গেছেন উদ্দীপকে উল্লিখিত মাদার তেরেসা।
✍ সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই। এই চরম সত্যই প্রকাশিত হয়েছে ‘মানুষ’ কবিতা এবং উদ্দীপকে। মাদার তেরেসা তাঁর সেবাকর্মের ক্ষেত্রে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ করেননি। আর্তমানবতার আহবানে সাড়া দেওয়াই ছিল তাঁর জীবনের মূল উদ্দেশ্য। তাই বিশ্বজুড়ে সকল মানুষের মনে তিনি জায়গা করে নিয়েছেন পরম শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে। ‘মানুষ’ কবিতায় সমাজের একটি ত্রæটিপূর্ণ দিক চিহ্নিত করে কবি বোঝাতে চেয়েছেন, মানুষের চেয়ে বড় কিছু হতে পারে না। স্রষ্টার প্রতিনিধি বলে যারা পরিচিত তারা মানুষের চেয়ে নিজেদের স্বার্থকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ায় তিনি তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। মাদার তেরেসা মানবতাকে সবার ঊর্ধ্বে তুলে ধরার মাধ্যমে কবির প্রত্যাশাকেই পূর্ণ করেছেন।
৯ম-১০ম শ্রেণিরবাংলা ১ম পত্র গাইডমানুষকবিতাসৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
SSC Bangla 1st PaperManushKobitaSrijonshilQuestion-Answer৪নং সৃজনশীল প্রশ্নঃ
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
(i) “বায়তুল মাল হইতে লইয়া ঘৃত আটা নিজ হাতে,
বলিলে এসব চাপাইয়া দাও আমার পিঠের ‘পরে,
আমি লয়ে যাব বহিয়া এসব দুখিনী মায়ের ঘরে।”
(ii) “জীর্ণ-বস্ত্র শীর্ণ-গাত্র, ক্ষুধায় কণ্ঠ ক্ষীণ-
ডাকিল পান্থ, দ্বারা খোলো বাবা, খাইনি তো সাত দিন।
সহসা বন্ধ হল মন্দির।”
ক. পথিক কী বলে পূজারিকে ডাক দিল? ১
খ. ‘মানুষ’ কবিতায় ‘স্বার্থের জয়’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে? ২
গ. উদ্দীপক (i) ও উদ্দীপক (ii) -এর ভাবগত পার্থক্য দেখাও। ৩
ঘ. “উদ্দীপকের কোন ভাবকে সমর্থন করে?” বিশ্লেষণ করো। ৪
৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ
ক. ‘দ্বার খোলো বাবা, খাইনি তো সাত দিন’ বলে পথিক পূজারিকে ডাক দিল।
খ. ‘মানুষ’ কবিতায় ‘স্বার্থের জয়’ বলতে ধর্মের নামে ভণ্ড কপটচারীদের স্বার্থ চরিতার্থ করার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।
✍ মানবতার কল্যাণ সাধনই সকল ধর্মের শিক্ষা ও আদর্শ। আর সৃষ্টিকর্তার সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষ। মসজিদের মোল্লা সাহেব কিংবা মন্দিরের পুরোহিতরা কখনও কখনও এই নিগূঢ় সত্যটি ভুলে যায়। তাই কবি বলেছেন, ভণ্ড ধার্মিকরা তাই খোদার মিনারে চড়ে কল্যাণের আহবান না জাানিয়ে বরং স্বার্থের জয়গান যেন উচ্চারণ করে।
গ. উদ্দীপক (i)-এ মানবিতার বোধ প্রকাশিত হলেও উদ্দীপক (ii)-এ প্রকাশিত হয়েছে মানবিক বোধহীনতার কথা।
✍ কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর ‘মানুষ’ কবিতায় মানবতার কথা বলেছেন। তাঁর মতে, মানুষের আসল পরিচয় সে একজন মানুষ। তাই তাকে সে হিসেবেই মূল্যায়ন করা উচিত। কিন্তু সমাজের ভণ্ড ও স্বার্থান্ধ শ্রেণির লোকেরা মানুষে-মানুষে বিভেদরেখা তৈরি করে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করে। সেই অনুভূতিরই খণ্ডিত ভাব প্রকাশিত হয়েছে উদ্দীপক (ii)-এ।
✍ উদ্দীপক (i)-এ প্রকাশিত হয়েছে মানবদরদী এক শাসকের মহানুভবতার কথা। দরিদ্র দুঃখিনী নারীর কষ্ট দেখে তিনি অত্যন্ত মর্মাহত হন। তাই শাসক হয়েও বাইতুল মাল থেকে আটা, ঘি ইত্যাদির বস্তা নিজের কাঁধে করে দুঃখিনী মায়ের ঘরে পৌঁছে দেওয়ার সংকল্প করেন। উদ্দীপকের (i)-এ মানবতার জয়গান গাওয়া হলেও উদ্দীপকে (ii)-এর প্রকাশ পেয়েছে মানবতার অপমানের চিত্র।
ঘ. উদ্দীপক (i)-এ যে মানবতাবোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে তা সবার মাঝে ঘটুক-এ প্রত্যাশাই করেছেন ‘মানুষ’ কবিতার কবি কাজী নজরুল ইসলাম।
✍ ‘মানুষ’ কবিতায় কবি কাজী নজরুল সাম্যের জয়গান গেয়েছেন। তাঁর মতে, পৃথিবীতে মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ নেই। তাই সমাজে মানুষের মাঝে যে শ্রেণিভেদ দেখা যায় তা অর্থহীন। সমাজের এক শ্রেণির মানুষ এ ভেদাভেদ থেকে ফায়দা লুটে নেয় বলে কবি তাদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
✍ উদ্দীপক (i)-এর চিত্রটি মানবতাবাদী চেতনার এক অনন্য উদাহরণ। শাসক হওয়া সত্ত্বেও দরিদ্র নারীর ক্ষুধার অন্নের সংস্থানের জন্য ভৃত্য সাজার কথা বলা হয়েছে এখানে। অন্যদিকে উদ্দীপক (ii)-এ দেখা যায় অসহায় ভিখারি মন্দিরে গিয়ে ক্ষুধার অন্ন চাইলেও তার মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। মানবতার কবি কাজী নজরুল ‘মানুষ’ কবিতার মাধ্যমে (i) নং উদ্দীপকের মতো সহানুভূতিশীল মানবসমাজের প্রত্যাশী।
✍ মানুষের চেয়ে বড় কিছু নেই। সকল ধর্মের মূলকথাও এটি। অথচ সামর্থ্য থাকার পরও নিরন্ন মানুষকে সাহায্য করে না অনেক মোল্লা ও পুরোহিত। এ ধরনের হৃদয়হীন কাজের প্রতি ঘৃণা ও প্রতিবাদ প্রকাশিত হয়েছে ‘মানুষ’ কবিতায়। মনুষ্যত্বের পরিচয়কে সবচেয়ে বড় করে দেখে মানুষের মূল্যায়ন করা উচিত। যেমনটা উদ্দীপক (i)-এর শাসক করেছেন। অন্যদিকে উদ্দীপক (ii)-এ ঠিক তার বিপরীত দিকটিই দেখানো হয়েছে। তাই বলা যায়, উদ্দীপক (i)-এর ভাবই সাম্যের কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘মানুষ’ কবিতায় প্রকাশিত হয়েছে।
৯ম-১০ম শ্রেণিরবাংলা ১ম পত্র গাইডমানুষকবিতাসৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
SSC Bangla 1st PaperManushKobitaSrijonshilQuestion-Answer৫নং সৃজনশীল প্রশ্নঃ
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
মানুষেরে ঘৃণা করি’
ও’ কারা কোরআন, বেদ, বাইবেল চুম্বিছে মরি মরি
ও’ মুখ হতে কেতাব গ্রন্থ নাও জোর ক’রে কেড়ে,
যাহারা আনিল গ্রন্থ-কেতাব সেই মানুষের মেরে
পূজিছে গ্রন্থ ভণ্ডের দল।
ক. ‘মানুষ’ কবিতাটি কে লিখেছেন? ১
খ. “সহসা বন্ধ হলো মন্দির” কেন? ২
গ. উদ্দীপকে ‘মানুষ’ কবিতাটির কোন দিকটি প্রকাশ পেয়েছে? ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. ‘মানুষ’ কবিতার আলোকে উদ্দীপকের ভণ্ডদলের স্বরূপ বিশ্লেষণ করো।
৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ
ক. ‘মানুষ’ কবিতাটি লিখেছেন কাজী নজরুল ইসলাম।
খ. পূজারীর মাঝে কোনো মানবতাবোধ না থাকায় সে ভুখারিকে দেখে দ্রæত মন্দির বন্ধ করে দেয়।
✍ পূজারী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থাকলেও তার মাঝে কোনো মানবতাবোধ নেই। সে শুধু নিজের স্বার্থকেই বড় করে দেখে। তাই বাইরে দেবতা দাঁড়িয়ে আছে ভেবে দরজা খুলে যখন দেখে ভুখারি দাঁড়িয়ে রয়েছে তখন সে হতাশ হয়। আর একারণেই পূজারী মন্দিরের দরজা বন্ধ করে দেয়।
গ. উদ্দীপকে ‘মানুষ’ কবিতার সাম্যবাদী চেতনার দিকটি প্রকাশ পেয়েছে।
✍ মানুষের চেয়ে মহিয়ান কিছু হতে পারে না। তাই মানুষকে কখনো ঘৃণা করতে নেই। যেখানে মানুষকে ঘৃণা করে অন্য কিছুকে বড় করা হয় সেখানেই প্রতিবাদ জানানো প্রয়োজন। ‘মানুষ’ কবিতায় কবি কাজী নজরুল ইসলাম সাম্যবাদী চেতনার এই দিকটিই প্রকাশ করেছেন।
✍ উদ্দীপকে ‘মানুষ’ কবিতায় বর্ণিত সাম্যবাদের প্রতিফলন ঘটেছে। সেখানে মানুষকে ঘৃণা করতে নিষেধ করা হয়েছে। যারা ধর্মগ্রন্থকে পুঁজি করে মানুষের সাথে দুর্ব্যবহার করে উদ্দীপকে তাদের প্রতিরোধ করার জন্য বলা হয়েছে। উদ্দীপকের এই দিকটি ‘মানুষ’ কবিতায় বর্ণিত মোল্লা পুরুতের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী চেতনার ধারক। উদ্দীপকের মতোই কবিতায় মানুষকে ঘৃণা করার কারণে মোল্লা পুরুতকে ভণ্ড বলেছেন। এজন্য বলা যায়, উদ্দীপকে ‘মানুষ’ কবিতার সাম্যবাদী চেতনার প্রতিফলন ঘটেছে।
ঘ. যারা ধর্মগ্রন্থগুলোকে খুব শ্রদ্ধা করে এবং ধর্মের জন্য জীবন বাজি রাখে কিন্তু মানুষকে ঘৃণা করে উদ্দীপক ও ‘মানুষ’ কবিতানুসারে তারাই ভণ্ড।
✍ পৃথিবীতে নানা ধর্ম, বর্ণ ও গোত্র আছে। বিভিন্ন ধর্মের জন্য পৃথক ধর্মগ্রন্থও আছে। মানুষ এসব ধর্মগ্রন্থকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করে। কিন্তু অনেক ধর্মগ্রন্থের পূজারী আছে যারা মানুষকে ঘৃণা করে। কিন্তু ধর্মগ্রন্থেই মানুষকে মহিয়ান বলা হয়েছে। ‘মানুষ’ কবিতায় কাজী নজরুল ইসলাম এ ধরনের ধর্মের পূজারীদের স্বরূপ উন্মোচন করেছেন।
✍ উদ্দীপকে মানুষকে ঘৃণাকারী ধর্মগ্রন্থের পূজারীদের ভণ্ড বলা হয়েছে। কেননা ধর্মগ্রন্থেই মানুষকে মহিয়ান বলা হলেও সেসব পূজারীরা সেই মানুষকেই ঘৃণা করে। মানুষ মানুষকে ভালোবাসলে ধর্মকে মানা হয়। কারণ ধর্মে মানুষকে ভালোবাসতে বলা হয়েছে। কিন্তু যারা ভণ্ড তারা মুখে ধর্মের বুলি আওড়ালেও মানুষকে ঘৃণা করে।
✍ ‘মানুষ’ কবিতার মোল্লা পুরুত উদ্দীপকে বর্ণিত ভণ্ডদেরই প্রতিনিধি। তারা ধর্মের জন্য জীবন বাজি রাখতে প্রস্তুত থাকলেও কোনো নিরন্ন অসহায়কে সামর্থ্য থাকার পরও অন্ন দান করে না। এ ধরনের মানুষগুলো ধর্মের পূজা করে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য। ফলে তারা ভণ্ড। ‘মানুষ’ কবিতায় মোল্লা পুরুত স্বার্থবাদী চেতনার কারণে ভণ্ডামীর প্রকাশ ঘটিয়েছে। উদ্দীপকেও এ ধরনের মানুষগুলোকে ভণ্ড বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাই বলা যায়, ধর্মের পূজারী হলেও নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য মানুষকে ঘৃণা করার কারণে ‘মানুষ’ কবিতার পূজারীরা উদ্দীপকের পূজারিদের মতোই ভণ্ড।
৯ম-১০ম শ্রেণিরবাংলা ১ম পত্র গাইডমানুষকবিতাসৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
SSC Bangla 1st PaperManushKobitaSrijonshilQuestion-Answer৬নং সৃজনশীল প্রশ্নঃ
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
দেখিনু সেদিন রেলে-
কুলি বলে এক বাবু সাব তারে ঠেলে দিলে নিচে ফেলে,
চোখ ফেটে এলো জল-
এমনি করে কি জগৎ জুড়িয়া মার খাবে দুর্বল?
ক. কালাপাহাড়ের প্রকৃত নাম কী? ১
খ. মোল্লা সাহেব হেসে কুটি কুটি হয় কেন? ২
গ. উদ্দীপকের বাবু সাহেবের আচরণে ‘মানুষ’ কবিতার যে ভাব ফুটে উঠেছে তা ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. “উদ্দীপকের কুলি ও ‘মানুষ’ কবিতার ভুখারির বঞ্চনা যেন একসূত্রে গাঁথা”- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো। ৪
৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ
ক. কালাপাহাড়ের প্রকৃত নাম রাজচন্দ্র বা রাজকৃষ্ণ।
খ. মসজিদের শিরনি বেঁচে যাওয়ায় স্বার্থলোভী মোল্লা সাহেব হেসে কুটি কুটি হয়।
✍ কবিতায় বর্ণিত মোল্লা সাহেব একজন স্বার্থলোভী, ভণ্ড। সে মসজিদের শিরনি বেঁচে গেলে সব নিজে নিয়ে নেয়। তাই নিজের স্বার্থ লাভের আশায় অধীর আগ্রহে থাকা মোল্লা যখন দেখে সত্যিই শিরনি বেঁচে গিয়েছে তখন সে খুশি হয়ে হেসে কুটি কুটি হয়।
গ. উদ্দীপকের বাবু সাহেবের আচরণ ‘মানুষ’ কবিতায় বর্ণিত মোল্লা ও পুরোহিতের অমানবিক আচরণকেই স্মরণ করিয়ে দেয়।
✍ ‘মানুষ’ কবিতায় কাজী নজরুল ইসলাম সাধু সেজে থাকা সমাজের একশ্রেণির ভণ্ড মানুষের মুখোশ উন্মোচন করেছেন। ধর্মীয় কারণে সবাই মোল্লা ও পুরোহিতদের শ্রদ্ধা করে। ধর্মের বিধান অনুযায়ী তাদের উচিত সবাইকে সমানভাবে ভালোবাসা। অথচ তাদেরই কেউ কেউ নিজেদের তথাকথিত উঁচু শ্রেণির সম্মানিত মানুষ বলে মনে করে। নিরন্ন ভিখারিকে সামান্য অন্ন দিতেও তারা অনাগ্রহী।
✍ উদ্দীপকে প্রকাশিত হয়েছে সমাজের শ্রেণিবিভেদের নির্মম রূপটি। কুলি হওয়ায় এক বাবুর নির্যাতন সহ্য করতে হয় অসহায় একজন মানুষকে। বাবু সাহেব নিজেকে কুলির তুলনায় উন্নত শ্রেণির মনে করার কারণেই তিনি এমন ঘৃণ্য কাজ করতে দ্বিধা করেননি। ‘মানুষ’ কবিতায় উল্লিখিত মোল্লা ও পুরোহিতদের মতোই উদ্দীপকে বর্ণিত বাবু সাহেব হৃদয়হীনতার পরিচয় দিয়েছেন।
ঘ. উদ্দীপকের কুলি এবং ‘মানুষ’ কবিতার ভুখারি উভয়ের সামাজিক শ্রেণিবিভেদজনিত অমানবিকতার শিকার।
✍ সাম্যের কবি কাজী নজরুল ইসলাম ‘মানুষ’ কবিতায় মানবতার জয়ধ্বনি করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন সমাজের সম্মানিত বলে স্বীকৃত মানুষদের কাছে তথাকথিত নিচু শ্রেণির মানুষেরা কীভাবে নিগৃহীত হয়। কবির মতে, মানুষে মানুষে এমন ভেদাভেদ কোনোভাবেই কাম্য নয়।
✍ উদ্দীপকে প্রকাশিত হয়েছে দরিদ্র কুলির ওপর এক বাবু সাহেবের অত্যাচারের চিত্র। আভিজাত্যের অহংকারে তিনি মানুষকে মানুষ বলে মনে করেননি। অমানবিকতার এরূপ দৃষ্টান্ত শুধু বাবু সাহেবের মতো হীন মানসিকতার লোকেরাই করতে পারে। বাবুসাহেব নিজেকে নিয়ে আত্মঅহংকারী ছিলেন বলেই কুলির প্রতি অবিচার করতে পেরেছেন। ‘মানুষ’ কবিতায় বর্ণিত ভুখারির প্রতি চরম অবহেলার কারণও এটি।
✍ মানুষ মানুষের জন্য। কিন্তু এই পরম সত্যকে ভূলুণ্ঠিত করেছে ‘মানুষ’ কবিতায় বর্ণিত মোল্লা ও পুরোহিত। সাত দিন ধরে অভুক্ত ভুখারিকে খাবার দেওয়ার বদলে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি নিয়ে ব্যস্ত থেকেছে। মনুষ্যত্ববোধ না থাকার কারণেই তারা এমন নিষ্ঠুরতা দেখাতে পেরেছে। উদ্দীপকের বাবু সাহেব কুলিকে ঠেলে ট্রেন থেকে ফেলে দিয়েছেন। সামন্তবাদী মনোভাবই তাঁর এমন ঘৃণ্য আচরণের কারণ। কবিতার মোল্লা ও পুরোহিত এবং উদ্দীপকের বাবু সাহেব যদি মনুষ্যত্বের মর্যাদা সম্পর্কে সচেতন হতেন তবে এমন অনাকাঙক্ষিত ঘটনা ঘটত না। উভয় ঘটনাই আমাদের সামনে মানবিকতার বোধহীনতার ব্যাপারটি দৃশ্যমান করে তোলে।
৯ম-১০ম শ্রেণিরবাংলা ১ম পত্র গাইডমানুষকবিতাসৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
SSC Bangla 1st PaperManushKobitaSrijonshilQuestion-Answer৭নং সৃজনশীল প্রশ্নঃ
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
সেবার তীব্র শীতে হিজুলিয়া গ্রামের মানুষ কাঁপছিল। ঘন কুয়াশায় ভর দুপুরেও সূর্যের দেখা নেই। ভয়াবহ শীতে গরিব বস্ত্রহীন মানুষের দুর্গতির সীমা ছিল না। শিক্ষক আজমল হোসেন এ অবস্থায় ঢাকায় গিয়ে বন্ধুবান্ধব ও বিভিন্ন জন থেকে গরম কাপড় সংগ্রহ করলেন এবং প্রায় প্রতিটি পরিবারে কম্বলসহ গরম কাপড় পৌঁছে দিলেন।
ক. কবির মতে কার চেয়ে বড় কিছু নেই? ১
খ. মানুষের চেয়ে কিছু মহীয়ান নেই কেন? ২
গ. শিক্ষক আজমল হোসেন ‘মানুষ’ কবিতায় উল্লিখিত মোল্লা সাহেব ও পুরোহিত চরিত্রের বিপরীত রূপটি ধারণ করেছে কীভাবে- ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. সমাজে আজমল হোসেনদের মানবিক ও মহতী উদ্যোগ ‘মানুষ’ কবিতার আলোকে বিশ্লেষণ করো। ৪
৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ
ক. কবির মতে মানুষের চেয়ে বড় কিছু নেই।
খ. মানুষ সর্বশ্রেষ্ঠ জীব হওয়ায় পৃথিবীতে মানুষের চেয়ে মহীয়ান কিছু নেই।
✍ মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ। পৃথিবীতে সকল জীবের ওপরে তার স্থান। মানুষ জগৎকে নিয়ন্ত্রণ করছে তাদের বুদ্ধির দ্বারা। আর এই মানুষের চেয়ে বড় কিছু হতে পারে না সেকথা ধর্মও বলে। তাই মানুষের চেয়ে মহীয়ান কিছু নেই।
গ. উদ্দীপকের আজমল হোসেন পরোপকারী কিন্তু ‘মানুষ’ কবিতার মোল্লা সাহেব ও পুরোহিত স্বার্থপর বিধায় তারা একে অন্যের বিপরীত চরিত্রকে ধারণ করে।
✍ ‘মানুষ’ কবিতায় কাজী নজরুল ইসলাম সমাজে বিদ্যমান অসংগীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। সামর্থ্য থাকার পরও অসহায় নিরন্ন মানুষকে যারা খাবার দেয় না তারা মানুষ হিসেবে বিবেচ্য নয়। ‘মানুষ’ কবিতায় মোল্লা ও পুরোহিত তাদের সামর্থ্য থাকার পরও নিরন্নকে সাহায্য করেনি। অপমান করে বিতাড়িত করেছে। তাই কবিতায় উল্লিখিত মোল্লা ও পুরোহিতদের হৃদয়হীন কর্মকাণ্ডে কবি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
✍ উদ্দীপকে একজন মানবতাবাদী শিক্ষক প্রচণ্ড শীতে দুর্ভোগের শিকার মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। শহরে গিয়ে গরম কাপড় সংগ্রহ করে তা দরিদ্র মানুষের নিকট পৌঁছে দিয়েছেন। তাঁর এ মহতী কাজে অসহায় মানুষগুলোর কষ্ট অনেকখানি লাঘব হয়। মানবতার সেবা করাই তো মানুষের ধর্ম। মানুষের সাথে মানবিক আচরণের মধ্য দিয়ে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটে। সেই ক্ষেত্রে মসজিদের মোল্লা এবং মন্দিরের পুরোহিত সেই মানবিকতা না দেখিয়ে একজন ক্ষুধার্ত মানুষকে নির্দয়ভাবে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছে। মোল্লা ও পুরোহিত তার প্রতি সমব্যথী না হয়ে মানবতার অপমান করেছে। তাই মোল্লা সাহেব ও পুরোহিত হচ্ছে শিক্ষক আজমল হোসেনের বিপরীত প্রতিরূপ।
ঘ. ‘মানুষ’ কবিতায় আলোকে বলা যায়, সমাজে আজমল হোসেনদের মতো মানুষের মানবিক ও মহতী উদ্যোগ একটি দরদি সমাজ গঠনে ভূমিকা পালন করে।
✍ কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর ‘মানুষ’ কবিতায় সাম্যের গান গেয়েছেন। তিনি দেশ-কাল-পাত্র নির্বিশেষে মানুষকেই সবার ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছেন। একজন ক্ষুধার্ত মানুষ যখন খাবার খুঁজে ফিরছিল তখন তার সামনে পূজারি মন্দিরের দরজা বন্ধ করেছিল। অনুরূপভাবে মোল্লা সাহেবও মসজিদের দরজা বন্ধ করে দেয়। কবি তাই মসজিদ, মন্দির তথা ভজনালয়ের তালা দেওয়া দ্বার ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি মনে করেন, মনুষ্যত্বের চর্চা না করে এসব লৌকিক ধর্মচর্চা অর্থহীন।
✍ উদ্দীপকে উল্লিখিত শিক্ষক আজমল হোসেন মনুষ্যত্বের চরম পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছেন। অসহায় মানুষের কষ্ট দেখে তাঁর মন কেঁদে উঠেছে। তাই তিনি শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাদের জন্য বন্ধু-বান্ধবের কাছে হাত পেতেছেন। গরম কাপড় বয়ে নিয়ে এসে তাদের মাঝে বিলিয়ে দিয়েছেন। তাঁর এরূপ মানসিকতা সমাজকে বদলে দিতে পারে।
✍ ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত উদ্যোগে অনেক বড় বড় কাজ সম্পাদিত হতে পারে। শিক্ষক আজমল হোসেন যে উদ্যমী ভূমিকা পালন করেছেন, তা অন্যদের জন্য অনুকরণীয় আদর্শ। সকলেই যদি তার মতো আদর্শবান হতো এবং মানবতার সেবায় এগিয়ে আসত তাহলে সমাজের রূপ পাল্টে যেতো। ‘মানুষ’ কবিতায় যে অমানবিকতার দিকটি উঠে এসেছে তা সমাজে আর থাকতো না। ফলে সমাজ হয়ে উঠত সুন্দর ও মানবিক। উদ্দীপকের আজমল হোসেনের মতো কবিতার মোল্লা-পুরুতরাও যদি মানবিক হতো- তাহলে প্রেমপ্রীতির বন্ধনে এক সুন্দর সমাজ গড়ে উঠত।
৯ম-১০ম শ্রেণিরবাংলা ১ম পত্র গাইডমানুষকবিতাসৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
SSC Bangla 1st PaperManushKobitaSrijonshilQuestion-Answer৮নং সৃজনশীল প্রশ্নঃ
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ফুলহারা গ্রামের ধনাঢ্য কৃষক রজব আলী তার লোকজন নিয়ে উঠানে ধান মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত ছিলেন। এক বৃদ্ধ ভিখারিনী এসে বলল, বাবা কিছু সাহায্য দেন। শুনেই রজব আলী রেগে-মেগে বললেন, কাজ করে খেতে পার না? যাও যাও বিরক্ত করো না। ভিখারিনী মনে কষ্ট নিয়ে ফিরে গেল।
ক. ‘সাম্য’ শব্দের অর্থ কী? ১
খ. “পথ জুড়ে তার ক্ষুধার মানিক জ্বলে” বলতে কী বোঝানো হয়েছে? ২
গ. ‘মানুষ’ কবিতার কোন চরিত্রের সাথে উদ্দীপকের রজব আলীর সাদৃশ্য বিদ্যমান ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. সমাজে রজব আলী চরিত্রের প্রভাব ‘মানুষ’ কবিতার আলোকে বিশ্লেষণ করো। ৪
৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ
ক. ‘সাম্য’ শব্দের অর্থ সমতা।
খ. “পথ জুড়ে তার ক্ষুধার মানিক জ্বলে” বলতে ভুখারির জঠরজ্বালা বোঝানো হয়েছে।
✍ ‘মানুষ’ কবিতায় ক্ষুধার্ত ভুখারি না খেয়ে শীর্ণ হয়ে গেছে। তীব্র ক্ষুধায় সে মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়েছে একটু খাবারের আশায়। মন্দিরের পুরোহিতের কাছে গেলে পুরোহিত তাকে ফিরিয়ে দেয়। এমতাবস্থায় ক্ষুধার্তের ক্ষুধার তীব্রতা বোঝাতে প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি করা হয়েছে।
গ. মানুষ কবিতার মোল্লা চরিত্রের সাথে হৃদয়হীনতার দিক দিয়ে উদ্দীপকের রজব আলীর সাদৃশ্য বিদ্যমান।
✍ ‘মানুষ’ কবিতাটি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের এক যুগান্তকারী কবিতা। কবিতায় ‘মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই’ বলে কবি মানুষের জয়গান গেয়েছেন। কিন্তু সমাজে কিছু হৃদয়হীন মানুষ আছে যারা ধর্মের ধ্বজাধারী হিসেবে নিজেদের জাহির করলেও প্রকৃতপক্ষে তারা ধার্মিক নন। কবি এ কারণেই মোল্লা চরিত্র অঙ্কন করেছেন। একজন বয়োবৃদ্ধ অসহায় মানুষ প্রচণ্ড ক্ষুধায় অস্থির হয়ে মোল্লার কাছে হাত পেতেছে। কিন্তু মোল্লা নির্দয়ভাবে তাকে তাড়িয়ে দেয়।
✍ উদ্দীপকের কৃষক রজব আলীর প্রচুর ধনসম্পদ থাকলেও তার মধ্যে কোনো মানবিকতা নেই। বৃদ্ধ ভিখারিনী তার কাছে অভাবের তাড়নায় হাত পাতলে তাকে ভর্ৎসনা করে বিদায় করে। ভিখারিনী মনে গভীর কষ্ট নিয়ে সাহায্য না পেয়ে ফিরে যায়। ‘মানুষ’ কবিতায় মোল্লার কাছে ভিখারিও সাহায্য প্রার্থী হয়ে তিরস্কৃত হয়ে ফিরে গেছে। তাই মানুষ কবিতার মোল্লাসাহেব চরিত্রের সাথে উদ্দীপকে ধনাঢ্য কৃষক রজব আলীর সাদৃশ্য বিদ্যমান।
ঘ. মানুষ কবিতায় বর্ণিত পুরোহিত ও মোল্লার মতোই উদ্দীপকের রজব আলী একটি স্বার্থপর চরিত্র। এ ধরনের চরিত্র সমাজে নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করে।
✍ কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর ‘মানুষ’ কবিতায় সাম্যের গান গেয়েছেন। সমাজে বৈষম্য-অনাচার দূর করে সাম্য ও মৈত্রী প্রতিষ্ঠাই নজরুলের রচনার উদ্দেশ্য। ‘মানুষ’ কবিতায় তিনি তার স্বাক্ষর রেখেছেন। মানুষের জয়গান গাওয়ার পাশাপাশি তিনি অন্যায় ও অসংগতির বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। মোল্লা ও পুরোহিত ক্ষুধার্ত একজন মানুষকে অমানবিকভাবে বিতাড়িত করেছে। ক্ষুধার্তকে অন্ন দেয়নি। বরং মসজিদ ও ভজনালয়ের দরজায় তালা লাগিয়ে দিয়েছে। কবি তাই দৃঢ়ভাবে সকলকে আহবান করেছেন সে তালা ভেঙে ফেলার জন্য।
✍ উদ্দীপকের ধনাঢ্য কৃষক রজব আলী আত্মঅহংকারে নিমগ্ন একজন মানুষ। দাম্ভিক স্বভাবের এই মানুষটির কাছে যখন একজন অসহায় ভিখারি হাত পাতে তখন ক্রুদ্ধ হয়ে তাকে কাজ করে খেতে বলে। স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে তাকে দূর দূর করে তাড়িয়েও দেয়। কোনো রকম সাহায্য-সহযোগিতা না করে অপমান করে বাড়ি হতে বের করে দেয়। তার এই আচরণে ভিখারি মনে কষ্ট নিয়ে চলে যায়।
✍ ‘মানুষ’ কবিতার মোল্লা-পুরুত এবং উদ্দীপকের রজব আলীর মতো লোকগুলো মানবতাবোধ বিবর্জিত কাজ করেছে। এ ধরনের কাজের ফলে সমাজে বৈষম্যই শুধু বৃদ্ধি পায়। ধনী-দরিদ্র, উঁচু-নীচু ভেদাভেদ সৃষ্টি হয়। উদ্দীপক এবং ‘মানুষ’ কবিতায় ভিখারি গভীর মনঃকষ্ট নিয়ে বিতাড়িত হয়েছে। এতে অসহায় নিরন্ন মানুষদের প্রতি অবিচারের দৃশ্য ফুটে উঠেছে। কিন্তু মানুষের চেয়ে বড় যে কিছু হতে পারে না ধর্মও সে কথা বলে। অথচ কবিতার মতো উদ্দীপকেও সেই মানুষকেই অবহেলা করা হয়েছে। এর ফলে সমাজে বৈষম্য সৃষ্টির পথ ত্বরান্বিত হয়েছে। সর্বোপরি উদ্দীপকের রজব আলী এবং ‘মানুষ’ কবিতায় বর্ণিত মোল্লা-পুরুত সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
৯ম-১০ম শ্রেণির
বাংলা ১ম পত্র গাইডমানুষকবিতাসৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
SSC Bangla 1st PaperManushKobitaSrijonshilQuestion-Answer৯নং সৃজনশীল প্রশ্নঃ
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
জামাল টিএসসিতে বসে চা খাচ্ছিল। হঠাৎ তার দৃষ্টি পড়ল এক জীর্ণশীর্ণ শিশুর প্রতি। শিশুটি ক্ষুধা-তৃষ্ণায় যে কাতর তার মলিন মুখ দেখে সহজেই তা অনুমেয়। শিশুটি কাতর স্বরে জামালের পার্শ্ববর্তী এক ভদ্রলোকের কাছে সাহায্য চায়। কিন্তু লোকটি সাহায্য না করে উল্টো বিরক্ত হয় এবং শিশুটিকে ধাক্কা দেয়। শিশুটি রাস্তায় পড়ে গেলে জামাল আর বসে থাকতে পারে না। সে লোকটির কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানায় এবং শিশুটিকে ডেকে নিয়ে পাশের এক হোটেলে খাওয়ায়।
ক. ভুখারির বয়স কত? ১
খ. মোল্লা সাহেব হেসে কুটি কুটি হয় কেন? ২
গ. উদ্দীপকে জামালের দেখা লোকটির চরিত্রে ‘মানুষ’ কবিতায় বর্ণিত কোন চরিত্রের প্রতিফলন ঘটেছে? ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. “উদ্দীপকের জামালের মতো লোকরাই পারে ‘মানুষ’ কবিতায় বর্ণিত ভণ্ডদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে” উক্তিটির যথার্থতা নিরূপণ করো। ৪
৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ
ক. ভুখারির বয়স আশি বছর।
খ. সৃজনশীল প্রশ্ন ৬ (খ)-এর উত্তর দেখো।
গ. উদ্দীপকে জামালের দেখা লোকটির চরিত্রে ‘মানুষ’ কবিতায় বর্ণিত পূজারি ও মোল্লা সাহেবের চরিত্রের প্রতিফলন ঘটেছে।
✍ ‘মানুষ’ কবিতায় কবি সমাজের ভণ্ড ও স্বার্থলোভীদের মুখোশ উন্মোচন করেছেন। একজন বিপদগ্রস্ত অসহায় মানুষের উপকার করার মাঝেই প্রকৃত মানবিকতার প্রকাশ ঘটে। কিন্তু ভণ্ড স্বার্থলোভীরা কখনো অসহায় মানুষকে সাহায্য করে না তাদের স্বার্থহানির ভয়ে।
✍ উদ্দীপকে জামালের দেখা লোকটি ‘মানুষ’ কবিতায় বর্ণিত ভণ্ড পূজারি এবং মোল্লা সাহেবেরই প্রতিকৃতি। কবিতায় পূজারি এবং মোল্লা সাহেব যেমন নিজের স্বার্থহানির ভয়ে ভিখারিকে ফিরিয়ে দেয় তেমনি জামালের দেখা লোকটিও নিজের স্বার্থহানির ভয়ে অসহায় ক্ষুধার্ত শিশুকে ফিরিয়ে দেয়। নিজের সামর্থ্য থাকার পরও কবিতার মোল্লা সাহেব এবং পূজারি কেউই ভিখারিকে সাহায্য করে না। এতে তাদের মাঝে থাকা নীচু মানসিকতা প্রকাশ পায়। তাই বলা যায়, জামালের দেখা লোকটি যেন কবিতার মোল্লা সাহেব ও পূজারির বাস্তব প্রতিভূ।
ঘ. ‘মানুষ’ কবিতায় বর্ণিত ভণ্ড দুয়ারীদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে উদ্দীপকের জামালের মতো প্রতিবাদী মানুষ একান্ত প্রয়োজন।
✍ ‘মানুষ’ কবিতায় সমাজের ভণ্ড ও মুখোশধারী মানুষগুলোর প্রকৃত রূপ তুলে ধরা হয়েছে। মুখোশধারীরা তাদের সামর্থ্য থাকার পরও অসহায় নিরন্ন, দরিদ্র মানুষকে সাহায্য করে না। তারা কেবল নিজের স্বার্থসিদ্ধির চিন্তাতেই মগ্ন। অথচ তারা ধর্মের বুলি আওড়ায়। কিন্তু ধর্মে মানুষকে সবচেয়ে বড় বলা হলেও তারা সেই মানুষকেই ঘৃণা করে।
✍ উদ্দীপকের জামাল সমাজের মুখোশধারীদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে কাজ করেছে। জামাল তার চোখের সামনে ঘটে যাওয়া অমানবিকতাকে সহ্য করতে পারেনি। তাই সে তার পাশের লোকটিকে বুঝিয়েছে প্রতিটি মানুষেরই মানবিক হওয়া উচিত। জামালের মাঝে মানবতাবোধ ছিল তীব্র। তাই সে তার সামনে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে এবং নিরন্ন মানুষের উপকার করেছে।
✍ উদ্দীপকের জামালের কর্মকাণ্ড কবিতায় বর্ণিত ভণ্ড পূজারি ও মোল্লা সাহেবের মতো লোকগুলোর জন্য শিক্ষণীয়। সমাজের সকল ক্ষেত্রে যদি জামালের মতো মানুষ থাকে তাহলে আর কেউ কবিতার মোল্লা সাহেবদের মতো ঘটনা ঘটাতে পারবে না। তারা তাদের কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হবে এবং পরবর্তী সময়ে আর এই কাজ করবে না। সবার উপরে মানুষ, মানুষের চেয়ে বড় কিছু যে হতে পারে না, ধর্মও সে কথাই বলে। তাই যেখানে মানুষকে ঘৃণা করে সমাজে বিদ্বেষ ছড়ানো হয় সেখানে জামালের মতো প্রতিবাদ করা প্রয়োজন। আর এক্ষেত্রে প্রশ্নোক্ত উক্তিটি যথার্থ ও সঠিক।
৯ম-১০ম শ্রেণিরবাংলা ১ম পত্র গাইডমানুষকবিতাসৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
SSC Bangla 1st PaperManushKobitaSrijonshilQuestion-Answer
জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
১. ‘মানুষ’ কবিতায় কবি কিসের গান গেয়েছেন?
উত্তর: ‘মানুষ’ কবিতায় কবি সাম্যের গান গেয়েছেন।
২. স্বপ্ন দেখে কে আকুল হয়ে ভজনালয় খোলে?
উত্তর: স্বপ্ন দেখে পূজারী আকুল হয়ে ভজনালয় খোলে।
৩. পূজারী কী হওয়ায় আশায় ভজনালয় খোলে?
উত্তর: পূজারী রাজা-টাজা হয়ে যাওয়ার আশায় ভজনালয় খোলে।
৪. পূজারী দরজা খুলে কাকে দেখে?
উত্তর: পূজারী দরজা খুলে একজন ভুখারিকে দেখে।
৫. মসজিদে কী শিরনি ছিল?
উত্তর: মসজিদে গোশত-রুটি শিরনি ছিল।
৬. কী বেঁচে যাওয়ায় মোল্লা সাহেব হেসে কুটি কুটি হয়?
উত্তর: গোশত-রুটি বেঁচে যাওয়ায় মোল্লা সাহেব হেসে কুটি কুটি হয়।
৭. ভুখারি কত দিন ভুখা ফাকা আছে?
উত্তর: ভুখারি সাতদিন ভুখা ফাকা আছে।
৮. কে গোস্ত-রুটি নিয়ে মসজিদে তালা দিল?
উত্তর: মোল্লা গোস্ত-রুটি নিয়ে মসজিদে তালা দিল।
৯. ভুখারির বয়স কত?
উত্তর: ভুখারির বয়স আশি বছর।
১০. ‘মহীয়ান’ অর্থ কী?
উত্তর: মহীয়ান অর্থ অতি মহান।
১১. ‘বর’ অর্থ কী?
উত্তর: ‘বর’ অর্থ আশীর্বাদ।
১২. ‘ভুখারি’ অর্থ কী?
উত্তর: ভুখারি অর্থ ক্ষুধার্ত ব্যক্তি।
১৩. গো-ভাগাড় কী?
উত্তর: গো-ভাগাড় হলো মৃত গরু ফেলার স্থান।
১৪. গজনির সুলতান মাহমুদ কতবার ভারত আক্রমণ করেন?
উত্তর: গজনির সুলতান মাহমুদ সতেরো বার ভারত আক্রমণ করেন।
১৫. কাজী নজরুল ইসলামের কোন কাব্য গ্রন্থ থেকে ‘মানুষ’ কবিতাটি সংকলিত?
উত্তর: কাজী নজরুল ইসলামের ‘সাম্যবাদী’ কাব্যগ্রন্থ থেকে ‘মানুষ’ কবিতাটি সংকলিত।
১৬. পূজারী কার বরে রাজা হওয়ার স্বপ্ন দেখে?
উত্তর: পূজারী দেবতার বরে রাজা হওয়ার স্বপ্ন দেখে ।
৯ম-১০ম শ্রেণিরবাংলা ১ম পত্র গাইডমানুষকবিতাসৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
SSC Bangla 1st PaperManushKobitaSrijonshilQuestion-Answer
অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
১. পূজারী আকুল হয়ে ভজনালয় খুলল কেন?
উত্তর: পূজারী দেবতার বরে রাজা-টাজা হয়ে যাওয়ার লোভে আকুল হয়ে ভজনালয় খুলল।
✍ পূজারী ভজনালয়ে থাকলেও সে স্বার্থলোভী। স্বার্থের লোভে সে সদা ব্যাকুল থাকে। কিন্তু মানবতার কোনো প্রকাশ তার মধ্যে নেই। সে স্বপ্নে দেবতাকে দেখে বর লাভের আশায় আকুল হয়ে ওঠে। তাই বাইরে ভুখারির ডাককে সে দেবতার ডাক মনে করেছে। এ কারণেই সে আকুল হয়ে ভজনালয় খুলল।
২. মোল্লা সাহেব গোশত-রুটি নিয়ে মসজিদে তালা দিল কেন?
উত্তর: মোল্লা সাহেব ভুখারিকে না দিয়ে নিজের স্বার্থসিদ্ধি নিশ্চিতকরণের জন্য গোশত-রুটি নিয়ে মসজিদে তালা দিল।
✍ মসজিদের গোশত-রুটি বেঁচে গেলে মোল্লা সাহেব নিজে তা নিয়ে নেয়। এজন্য সে চায় যেকোনো কারণে তার নিজের লাভের ভাগটা যেন না কমে। সে কারণে শিরনির গোশত-রুটি অতিরিক্ত থেকে গেলেও মোল্লা সাহেব ভুখারিকে দেন না। ভুখারিকে তেড়ে দিয়ে নিজের লাভ নিশ্চিত করার জন্য মোল্লা সাহেব গোশত-রুটি নিয়ে মসজিদে তালা দেয়।
৩. মোল্লা-পুরুত মসজিদ মন্দিরের সকল দুয়ারে চাবি লাগিয়েছে কেন?
উত্তর: নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য মোল্লা-পুরুত মসজিদ-মন্দিরের সকল দুয়ারে চাবি লাগিয়েছে।
✍ কবিতায় বর্ণিত মোল্লা ও পুরুত লোভী এবং স্বার্থপর মানুষ। তারা ধর্মকে ব্যবহার করে নিজেদের পকেট ভারী করার চিন্তায় নিমগ্ন। ফলে ধর্মে যে মানবতার কথা বলা হয়েছে তা তাদের কাছে গুরুত্ব পায় না। নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য তারা ধর্মকে ব্যবহার করে। এজন্য তারা মসজিদ মন্দিরে তালা-চাবি লাগাতেও কুণ্ঠাবোধ করে না।
৪. ‘মানুষ’ কবিতায় কবি কালাপাহাড়কে আহবান জানিয়েছেন কেন?
উত্তর: ‘মানুষ’ কবিতায় কবি উপাসনালয়ের ভণ্ড দুয়ারিদের ধ্বংস করার জন্য কালাপাহাড়কে আহবান জানিয়েছেন।
✍ কালাপাহাড় হিন্দু থেকে মুসলমান হওয়ার পর অনেক দেবালয় ধ্বংস করেছেন। কবিতায় যেসব ভণ্ড দুয়ারি মসজিদ মন্দিরের শাসক সেজে বসেছে তাদের ধ্বংস করার জন্য কালাপাহাড়ের মতো মানুষ প্রয়োজন। তাই কবি কালাপাহাড়কে এসব ভণ্ড লোককে ধ্বংসের জন্য আহবান জানিয়েছেন।
৫. কবি ভজনালয়ের সব তালা দেওয়া দ্বার ভেঙে ফেলতে বলেছেন কেন?
উত্তর: কবি ভণ্ড দুয়ারিদের ধ্বংস করে উপাসনালয়ে সকলের সাম্য নিশ্চিত করার জন্য ভজনালয়ের সব তালা দেওয়া দ্বার ভেঙে ফেলতে বলেছেন।
✍ কবিতায় ভণ্ড দুয়ারিদের মুখোশ উন্মোচন করা হয়েছে। ভণ্ড দুয়ারিরা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য মসজিদ-মন্দিরের শাসক সেজে বসেছে। তাদের দৌরাত্মের কারণে ধর্মক্ষেত্রেও মানবতা ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। তারা মসজিদ মন্দিরে তালা লাগিয়ে নিজেদের স্বার্থের জয়গান করে। তাই কবি এসব ভণ্ড দুয়ারিকে হটিয়ে সাম্য প্রতিষ্ঠা করার মানসে ভজনালয়ের সকল তালা দেওয়া দ্বার ভেঙে ফেলতে বলেছেন।
৬. মোল্লা সাহেব সামর্থ্য থাকার পরও ভুখারিকে ফিরিয়ে দেয় কেন?
উত্তর: মোল্লা সাহেব অতিরিক্ত গোশত-রুটি নিজে ভোগ করার জন্য সামর্থ্য থাকার পরও ভুখারিকে ফিরিয়ে দেয়।
✍ ‘মানুষ’ কবিতায় বর্ণিত মোল্লা সাহেব একজন স্বার্থপর মানুষ। তিনি ধর্মকে ব্যবহার করে প্রকৃতপক্ষে নিজের স্বার্থকেই বড় করে দেখেন। ফলে একজন ক্ষুধার্ত ভুখারির করুণ মুখের দিকে চেয়েও তার মনে কোনো করুণার উদ্রেক হয়নি। নিজের ভোগবাদী মানসিকতার ফলে তিনি সামর্থ্য থাকার পরও ভুখারিকে ফিরিয়ে দিয়েছেন।
৭. ‘নমাজ পড়িস বেটা?’- মোল্লা সাহেব কথাটি কেন বলল?
উত্তর: স্বার্থ উদ্ধারের অন্ধ নেশায় মোল্লা সাহেব ভুখারিকে প্রশ্নোক্ত কথাটি বলল।
✍ কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘মানুষ’ কবিতায় বর্ণিত মোল্লা সাহেব একজন স্বার্থপর মানুষ। মসজিদের বেঁচে যাওয়া শিরনির সম্পূর্ণটা সে নিজের করে নেয়। ভীষণ ক্ষুধার্ত ভুখারি একটু খাবার প্রার্থনা করলে তার কঠিন চিত্তে সামান্য আঁচড়ও পড়ে না। উল্টো ভুখারিকে জিজ্ঞেস করে সে নামাজ পড়ে কিনা। এভাবে ধর্মের দোহাই দিয়ে সে নিজের স্বার্থসিদ্ধি করতে চায়।
সত্যিই অসাধারণ হয়ছে
ReplyDeleteআমাদের দুইটি সাইটে আপনি,
Comment BackLink করতে চাইলে
করতে পারেন !
আমার সাইটের নাম
www.webangali.com
www.bd-express.top
ধন্যবাদ
Delete