বাংলা ১ম পত্র গাইড
কবিতা/পদ্য
আমার পরিচয়
সৈয়দ শামসুল হক
SSC Bangla 1st Paper Kobita
Amar Porichoy
Srijonshil
Question and Answer pdf download
১নং সৃজনশীল প্রশ্নঃ
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ইংরেজ শাসকদের কাছ থেকে উপমহাদেশের মুক্তির জন্য মহাত্মা গান্ধী এক সময় এদেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেন। নানাভাবে তাদের মাঝে দেশপ্রেম জাগ্রত করার চেষ্টা করেন। এরই ধারাবাহিক ফসল স্বদেশী আন্দোলন, অহিংস আন্দোলন ইত্যাদি। কালের বিবর্তনে জন্ম পাকিস্তান ও ভারত নামক দুটি পৃথক রাষ্ট্রের এবং পরবর্তীকালে বাংলাদেশের।
ক. বৌদ্ধবিহার কোথায় অবস্থিত? ১
খ. “আমি তো এসেছি ‘কমলার দীঘি’, ‘মহুয়ার পালা’ থেকে” - একথা দ্বারা কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন? ২
গ. উদ্দীপকটি ‘আমার পরিচয়’ কবিতার সাথে যেদিক দিয়ে সাদৃশ্যপূর্ণ তা ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. উদ্দীপকটি ‘আমার পরিচয়’ কবিতার খণ্ডাংশ মাত্র, পূর্ণচিত্র নয় - যুক্তিসহ লেখো। ৪
১ এর ক নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ
বৌদ্ধবিহার পাহাড়পুরে অবস্থিত।
১ এর খ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ
“আমি তো এসেছি ‘কমলার দীঘি’ ‘মহুয়ার পালা’ থেকে” বলতে আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বিকাশধারার কথা বলা হয়েছে।
বাঙালি জাতি সাংস্কৃতিক বিকাশ ও বিবর্তনের পথ ধরেই এই অবস্থানে এসেছে। ‘কমলার দীঘি’ ও ‘মহুয়ার পালা’ হচ্ছে মৈয়মনসিংহ গীতিকার পালা। এতে বাঙালির আবহমান জীবনধারার চিত্র প্রতিফলিত হয়েছে। সেই সংস্কৃতির ধারাবাহিকতার পথ ধরেই বাঙালি আজকের অবস্থানে এসেছে।
১ এর গ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ
আন্দোলন-সংগ্রাম ও বিবর্তনের ধারায় যে আজকের স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় হয়েছে তার প্রকাশ ঘটেছে উদ্দীপক ও ‘আমার পরিচয়’ কবিতায়।
বাংলাদেশ নামক স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ও বাঙালি জাতিসত্তার বিকাশ লাভ করেছে আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। তিতুমীর-হাজী শরিয়ত উল্লাহ থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর পর্যন্ত অসংখ্য বিপ্লবী তাতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁদের সেই কীর্তি আমাদের গৌরবোজ্জ্বল পরিচয় বহন করে। সেই ধারাবাহিকতায় আমরা পেয়েছি স্বাধীন স্বদেশ। সৈয়দ শামসুল হক তার ‘আমার পরিচয়’ কবিতায় গভীর মমত্বের সাথে চিত্রিত করেছেন আমাদের সংগ্রামী ইতিহাসের পটভূমি।
উদ্দীপকে বর্ণিত হয়েছে ইংরেজবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামের কথা। মহাত্মা গান্ধী উপমহাদেশের মানুষের মাঝে মুক্তির চেতনা ও দেশপ্রেম জাগ্রত করেন। সেই ধারাবাহিকতায় স্বদেশি আন্দোলন, অহিংস আন্দোলনের মতো ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটে। তারই পথ ধরে পাকিস্তান, ভারত পরে স্বাধীন বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়। উদ্দীপকে আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভ করে সেই বিষয়টি মুখ্য হয়ে উঠেছে। উদ্দীপকের এই দিকটি আমার পরিচয় কবিতার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
১ এর ঘ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ
‘আমার পরিচয়’ কবিতায় বাঙালি জাতিসত্তা প্রতিষ্ঠার সামগ্রিক ইতিহাস বর্ণিত হলেও উদ্দীপকে শুধু মানুষের মুক্তিসংগ্রামের কথা বলা হয়েছে।
সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক ‘আমার পরিচয়’ কবিতায় বাঙালি জাতীয় পরিচয় ও স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা অত্যন্ত মমতার সাথে তুলে ধরেছেন। রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে বাঙালি জাতি কীভাবে সমৃদ্ধ হয়েছে সেই ইতিহাস-ঐতিহ্য অত্যন্ত চমৎকারভাবে তুলে ধরা হয়েছে। চর্যাপদের সময় থেকে শুরু করে আজকের সাহিত্য চেতনা কীভাবে বিকাশ লাভ করেছে তারও সাক্ষ্য দেয় কবিতাটি। ‘আমার পরিচয়’ কবিতা মূলত বাংলাদেশের সামগ্রিক পরিচয়।
ইংরেজদের শোষণ-নির্যাতনে উপমহাদেশের মানুষ পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়ে পড়েছিল। তখন এই অঞ্চলের শান্তির প্রতীক মহাত্মা গান্ধী সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। তিনি সবার মাঝে দেশপ্রেম ও স্বাধীনতার চেতনা জাগ্রত করেছিলেন। সে কারণেই স্বদেশি আন্দোলন ও ‘অহিংস আন্দোলন’ নামে গুরুত্বপূর্ণ জাগরণের সূচনা ঘটে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে স্বাধীন রাষ্ট্র ভারত, পাকিস্তান পরবর্তীতে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের এই ইতিহাস ছাড়াও ‘আমার পরিচয়’ কবিতায় রয়েছে আরো অনেক বিষয়।
স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পেছনে রয়েছে এক সমৃদ্ধ ইতিহাস। পুরো পথটি মানুষের সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের মহিমায় পূর্ণ। আর যুগে যুগে মানুষের সেই অবিনাশী চেতনা গঠিত হয়েছে গৌরবময় সাংস্কৃতিক চর্চার দ্বারা। আমাদের এসবই ‘আমার পরিচয়’ কবিতায় উঠে এসেছে। কিন্তু আমাদের সাংস্কৃতিক জীবনবোধের পরিচয় আলোচ্য উদ্দীপকে অনুপস্থিত। ‘আমার পরিচয়’ ও উদ্দীপক পর্যালোচনা করলে পাই, উদ্দীপকে শুধু বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের কথাই বলা হয়েছে। সাংস্কৃতিক বিকাশ ও বিবর্তনের দিকসমূহ সেখানে আলোচিত হয়নি। তাই উদ্দীপকটি ‘আমার পরিচয়’ কবিতার খণ্ডাংশ মাত্র, পূর্ণচিত্র নয়।
৯ম-১০ম শ্রেণিরবাংলা ১ম পত্র গাইডআমার পরিচয়কবিতাসৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
SSC Bangla 1st PaperAmar PorichoyKobitaSrijonshilQuestion-Answer২নং সৃজনশীল প্রশ্নঃ
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
একসাথে আছি, একসাথে বাঁচি। আজও একসাথে থাকবই
সব বিভেদের রেখা মুছে দিয়ে, সাম্যের ছবি আঁকবই।
বাঙালির প্রাণ, বাঙালির মন, বাঙালির ঘরে যত ভাইবোন
এক হউক, এক হউক, এক হউক হে ভগবান।
ক. বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রথম নিদর্শনের নাম কী? ১
খ. এসেছি বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর থেকে। ব্যাখ্যা করো। ২
গ. উদ্ধৃত প্রথম চরণ দুটির সাথে দ্বিতীয় চরণ দুটির সাদৃশ্য ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. উদ্দীপকের দ্বিতীয় চরণ দুটির মূলভাব ‘আমার পরিচয়’ কবিতার সমগ্র মূলভাবকে ধারণ করে। উক্তিটির যথার্থতা মূল্যায়ন করো। ৪
২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ
ক. বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রথম নিদর্শন চর্যাপদ।
খ. বাঙালির স্বাধীনতা অর্জনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবিস্মরণীয় ভূমিকার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে আলোচ্য চরণে।
‘আমার পরিচয়’ কবিতায় বাঙালির ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি সব কিছুই তুলে ধরা হয়েছে। প্রসঙ্গক্রমে কবি এখানে স্বাধীনতা সংগ্রামের অগ্রনায়ক ও স্বাধীন বাংলাদেশের স্থাপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকার কথাও তুলে ধরেছেন। তাঁরই নেতৃত্বেই আমরা অর্জন করি স্বাধীন স্বদেশ। তাঁর সেই মহান কীর্তি স্মরণ করে বলা হয়েছে, ‘এসেছে বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর থেকে’।
গ. উদ্দীপকে উদ্ধৃত প্রথম ও দ্বিতীয় চরণদ্বয়ে বাঙালির ঐক্যবদ্ধতার আকাক্সক্ষা প্রকাশ পেয়েছে, যা ‘আমার পরিচয়’ কবিতাতেও লক্ষণীয়।
সৈয়দ শামসুল হক রচিত ‘আমার পরিচয়’ কবিতাটি বাঙালি জাতির ইতিহাস ও ঐতিহ্যের এক অনন্য আখ্যান। ইতিহাসের নানা ভাঙা-গড়ার খেলা বাঙালি জাতিতে সংঘবদ্ধ করেছে। একসাথে সংগ্রাম করে জাতি গঠনের প্রেরণা জুগিয়েছে সেই অনুভূতি প্রকাশিত হয়েছে উদ্দীপকে উদ্ধৃত প্রথম দুই চরণে।
বাংলার প্রতিটি মানুষ পরস্পরের অতি আপন। দেশের উন্নতির জন্য এই একতা অত্যন্ত জরুরি। বাঙালির মাঝে ঐক্যের সুর যেন ধ্বনিময় হয় সে প্রার্থনাই করা হয়েছে আলোচ্য উদ্দীপকের দ্বিতীয় কবিতাংশে। উদ্দীপকের প্রথম স্তবকেও আমরা বাঙালির একাত্মতার পরিচয় পাই।
[প্রশ্নটি সঠিক সৃজনশীল আঙ্গিকে রচিত না হওয়ায় পরিপূর্ণভাবে উত্তর দেওয়া যায়নি।]
ঘ. উদ্দীপকের শেষ দুই চরণে বাঙালির যে ঐক্যবদ্ধতার প্রত্যাশা ব্যক্ত হয়েছে ‘আমার পরিচয়’ কবিতায় কবির উদ্দেশ্যও তা-ই।
‘আমার পরিচয়’ কবিতায় কবি বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ধারাবাহিক ইতিহাস তুলে ধরেছেন। ইতিহাসের এই গুরুত্বপূর্ণ বাঁকগুলো বাঙালিকে বিশ্বের বুকে এক আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। আমাদের গর্বের ইতিহাসে ও ঐতিহ্য থেকে প্রেরণা নিয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারলেই দেশটাকে আমরা সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে পারব।
উদ্দীপকের দ্বিতীয় কবিতাংশে প্রকাশিত হয়েছে একটি প্রার্থনা। তা হলো- বাঙালি জাতির প্রাণ যেন এক সুতোয় গাঁথা থাকে। অর্থাৎ বাঙালি যেন পরস্পরকে একতার বাঁধনে বাঁধে। ‘আমার পরিচয়’ কবিতায় মূলসুরও এটি।
বাংলাদেশ আজ স্বাধীন, সার্বভৌম একটি দেশ। এদেশের স্বাধীন মর্যাদাশীল জাতিসত্তা গঠনের পেছনে রয়েছে সমৃদ্ধ এক ইতিহাস, শতবর্ষের ঐতিহ্য। সেই ইতিহাস ও ঐতিহ্যের পটভূমি ‘আমার পরিচয়’ কবিতার মাধ্যমে বাঙালিকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন কবি সৈয়দ শামসুল হক। কবিতার মাধ্যমে আমরা বিপুল বাংলাদেশের যে অনবদ্য রূপ পাই তা আমাদের জাতীয়তাবোধকে সমুন্নত করে আমাদের নিজস্ব ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। ফলে আমরা মনে-প্রাণে এক জাতিতে পরিণত হওয়ার অনুপ্রেরণা লাভ করি। প্রতিটি বাঙালির মনে যেন এমন আত্মীয়তার সুর জেগে ওঠে সেই প্রত্যাশা হয়েছে উদ্দীপকের দ্বিতীয় অংশে। এ কারণেই উদ্দীপকটিকে আলোচ্য কবিতার মূলভাবের ধারক বলা যায়।
এসএসসি বোর্ড পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতির জন্য পড়ুন সৃজনশীল ও বহুনির্বাচনি প্রশ্ন-উত্তরসহ:
৯ম-১০ম শ্রেণিরবাংলা ১ম পত্র গাইডআমার পরিচয়কবিতাসৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
SSC Bangla 1st PaperAmar PorichoyKobitaSrijonshilQuestion-Answer৩নং সৃজনশীল প্রশ্নঃ
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
১৯৫২ সাল। ছাত্র-জনতার শ্লোগানে শ্লোগানে রাজপথ উত্তাল। বাংলা ভাষার মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হতে তারা দেবে না কিছুতেই। ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ শ্লোগানে তাদের মনে সঞ্চারিত হয় অপরিমেয় শক্তি ও দুর্জয় সাহস।
ক. জয়বাংলা কী? ১
খ. জয়বাংলাকে বজ্রকণ্ঠ বলা হয়েছে কেন? ২
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ শ্লোগানটি ‘আমার পরিচয়’ কবিতার কোন বিষয়টি মনে করিয়ে দেয়? ৩
ঘ. উদ্দীপকটি কী ‘আমার পরিচয়’ কবিতার সমগ্রভাবের প্রকাশক? তোমার মতামত বিশ্লেষণ করো। ৪
৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ
ক. জয়বাংলা হলো মুক্তিযুদ্ধের সময়ে জাতীয় শ্লোগান হিসেবে অসাধারণ প্রেরণাসঞ্চারী শব্দমালা।
খ. জয়বাংলার প্রেরণাসঞ্চারী শ্লোগানে বাঙালি স্বাধীনতা অর্জনের শক্তি ও সাহস পেয়েছিল বলে জয়বাংলাকে বজ্রকণ্ঠ বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এই যুদ্ধে এক অসাধারণ প্রেরণাদায়ী শক্তি ছিল জয়বাংলা শ্লোগান। এই শ্লোগানে পুরো জাতি একতাবদ্ধ হয়ে লড়াই করেছে। তাই এই শ্লোগানকে বজ্রকণ্ঠ বলা হয়েছে।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ শ্লোগানটি ‘আমার পরিচয়’ কবিতায় বর্ণিত ভাষা আন্দোলনকে মনে করিয়ে দেয়।
‘আমার পরিচয়’ কবিতায় কবি শামসুর রহমান আমাদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ নিখুঁতভাবে তুলে ধরেছেন। তিনি ‘আমার পরিচয়’ শিরোনামে বাঙালির সত্যিকার পরিচয়টিই উপস্থাপন করেছেন। একের পর এক ঘটনা, প্রেক্ষাপট, ইতিহাস, আন্দোলন-সংগ্রাম ও গৌরবের দিকগুলো আমাদের সামনে উপস্থাপন করেছেন। কবি তার কবিতার ইতিহাসের অংশ হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনসহ বাঙালির ঐতিহাসিক কীর্তিগুলো তুলে ধরেছেন, যা জাতি হিসেবে আমাদের গৌরবান্বিত করে।
উদ্দীপকে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের উত্তাল দিনের কথা বলা হয়েছে। মায়ের ভাষাকে কেড়ে নিতে চেয়েছিল পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। প্রতিবাদে ছাত্র-জনতা সেদিন শ্লোগানে শ্লোগানে রাজপথ কাঁপিয়ে দিয়েছিল। বজ্রকঠিন সিদ্ধান্তে তারা অটল হয়েছিল বাংলা ভাষার মর্যাদা তারা রক্ষা করবেই। শ্লোগানের মধ্য দিয়ে তাদের মাঝে সঞ্চারিত হয়েছিল অপরিমেয় সাহস। বাঙালির জাতীয় জীবনে বাংলা ভাষা আন্দোলন ইতিহাস ঐতিহ্য হিসেবে অবশ্যই বিরাট অংশজুড়ে আছে। ‘আমার পরিচয়’ কবিতায়ও তাই ঐতিহাসিক রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের প্রসঙ্গ তুলে ধরা হয়েছে। এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যেন আমরা নতুন করে জন্মলাভ করেছি।
ঘ. ‘আমার পরিচয়’ কবিতায় উল্লিখিত হয়েছে বাঙালির সামগ্রিক রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস। উদ্দীপকে শুধু সংগ্রামমুখরতার প্রসঙ্গ উল্লিখিত হওয়ার এটি কবিতার সমগ্রভাবকে প্রকাশ করে না।
বাঙালির সমৃদ্ধ ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির পটভূমিতে ‘আমার পরিচয়’ কবিতাটি রচিত হয়েছে। কবি যথার্থভাবেই আমার পরিচয় অর্থাৎ, বাঙালির প্রকৃত পরিচয় তুলে ধরেছেন। ঠিক কোথা থেকে আমরা বাঙালিরা এই অবস্থায় এসে পৌঁছালাম তা সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। আমদের নানা আন্দোলন, সংগ্রাম থেকে শুরু করে লোকজীবন কোনো কিছুই বাদ যায়নি।
উদ্দীপকে উল্লেখ করা হয়েছে বাঙালির গৌরবের অর্জন রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন। ভাষার দাবি প্রতিষ্ঠার জন্য ছাত্র-জনতা রাজপথ কাঁপিয়ে প্রবল আন্দোলন গড়ে তোলে। ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ শ্লোগান তাদের মনে সাহস ও শক্তি সঞ্চার করে। তাদের আত্মত্যাগে ভাষার মর্যাদা সুপ্রতিষ্ঠিত হয়।
‘আমার পরিচয়’ কবিতায় কবি বাঙালির পূর্ণ পরিচয় তুলে ধরেছেন। ইতিহাসের গতিধারায় বাঙালির সকল গৌরবের অর্জনের উল্লেখ রয়েছে কবিতায়। তার ঐতিহ্য, জীবনযাত্রা, সংস্কৃতি সব কিছুই কবিতায় স্থান পেয়েছে। বাদ যায়নি কোনো আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাস। আলোচ্য উদ্দীপকে কেবল রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে। তাই উদ্দীপকটি ‘আমার পরিচয়’ কবিতায় সমগ্রভাব প্রকাশ করে না। আংশিক ভাব প্রকাশ ঘটে।
৯ম-১০ম শ্রেণিরবাংলা ১ম পত্র গাইডআমার পরিচয়কবিতাসৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
SSC Bangla 1st PaperAmar PorichoyKobitaSrijonshilQuestion-Answer৪নং সৃজনশীল প্রশ্নঃ
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
মৌর্য যুগ → গুপ্ত যুগ → স্বাধীন শাসক → পাল আমল → সেন আমল → মুসলিম শাসন → ইংরেজ শাসন → পাকিস্তান আমল → স্বাধীন বাংলাদেশ।
ক. ‘মহুয়ার পালা’ কী? ১
খ. ‘কৈবর্তের বিদ্রোহী গ্রাম’ বলতে কী বোঝ? ব্যাখ্যা করো। ২
গ. উদ্দীপকটি ‘আমার পরিচয়’ কবিতার কোন দিকটির প্রতিভাষ্য?-ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. ‘আমার পরিচয়’ কবিতায় বাঙালি জাতিসত্তার যে রাজনৈতিক ইতিহাস প্রকাশ পেয়েছে তার সমগ্রকে ধারণ করেছে উদ্দীপকের ছকটি-যৌক্তিক মূল্যায়ন করো। ৪
৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ
ক. মহুয়ার পালা হচ্ছে- মৈমনসিংহ গীতিকার একটি পালা।
খ. ‘আমার পরিচয়’ কবিতায় ‘কৈবর্তের বিদ্রোহী গ্রাম’ বলতে বাঙালির সংগ্রামমুখরতার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
আনুমানিক ১০৭০-১০৭৭ খ্রিষ্টাব্দে কৈবর্ত সম্প্রদায়ের লোক দিবৎ-এর নেতৃত্বে যে বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল ইতিহাস তা কৈবর্ত বিদ্রোহ নামে পরিচিত। রাজা মহীপালের বিরুদ্ধে অনন্ত-সামন্ত-চক্র মিলিত হয়ে এই কৈবর্ত বিদ্রোহের সূচনা করে। দিব্য বা দিব্বোক এই বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন। বাঙালি জাতির বিদ্রোহের ঐতিহ্য বোঝাতে এই উদাহরণটি উল্লেখ করা হয়েছে ‘আমার পরিচয়’ কবিতায়।
গ. উদ্দীপকে ‘আমার পরিচয়’ কবিতায় উল্লিখিত ইতিহাসের ধারাবাহিকতা সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।
‘আমার পরিচয়’ কবিতায় তুলে ধরা হয়েছে বাঙালি জাতির গৌরবোজ্জ্বল পরিচয় ও ইতিহাস। আদিকাল থেকে বাঙালি জাতির সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসের বিভিন্ন প্রেক্ষাপট কবিতায় উল্লেখ করা হয়েছে। ইতিহাসের ঘটনাক্রম অনুযায়ী চর্যাপদ, কৈবর্ত বিদ্রোহ, পালযুগ, বারো ভূঁইয়া, তিতুমীর, হাজী শরিয়ত, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ইত্যাদি বিষয় উল্লিখিত হয়েছে। অর্থাৎ ইতিহাসের এই ধারাবাহিকতা অবলম্বন করেই আজকের বাংলাদেশ।
উদ্দীপকে এই অঞ্চলের বিভিন্ন শাসনামলের ধারাবাহিক ছক অঙ্কন করা হয়েছে। এখানে দেখানো হয়েছে মৌর্য আমল থেকে শুরু হয়ে কীভাবে নানা পটপরিবর্তিত হয়েছে। সেই সব ঐতিহাসিক সময়গুলো পাড়ি দিয়ে আমরা আজকের স্বাধীন বাংলাদেশে এসে উপনীত হয়েছে। প্রতিটি দেশ-জাতি এভাবেই ইতিহাসের গতিধারায় এগিয়ে চলে। ‘আমার পরিচয়’ কবিতায়ও অনুরূপভাবে বাঙালির পরিচয় তুলে ধরতে গিয়ে কবি ইতিহাসের সেই ক্রমধারাটি তুলে ধরেছেন।
ঘ. উদ্দীপকের ছকটিতে প্রকাশিত রাজনৈতিক শাসনামলের ধারাবাহিকতার চিত্রটি ‘আমার পরিচয়’ কবিতায় বর্ণিত বাঙালি জাতিসত্তার যা রাজনৈতিক ইতিহাসকে সফলভাবে ধারণ করেছে।
‘আমার পরিচয়’ কবিতায় তুলে ধরা হয়েছে বাঙালির জাতিসত্তার পরিচয়। এখানে বাংলার প্রাচীন অবস্থা থেকে আধুনিক অবস্থায় পর্যন্ত ইতিহাসের বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহের উল্লেখ করা হয়েছে। অত্যন্ত প্রাসঙ্গিকভাবে বিভিন্ন শাসনামলে সংঘটিত আন্দোলন, সংগ্রাম, বিদ্রোহ, মুক্তিযুদ্ধ ইত্যাদি এই কবিতায় স্থান পেয়েছে। অর্থাৎ বাঙালি জাতিসত্তার রাজনৈতিক ইতিহাসের ধারাটি কবিতায় তুলে ধরেছেন কবি।
উদ্দীপকে প্রকাশিত হয়েছে মৌর্যযুগ থেকে শুরু হয়ে বাঙালির পথপরিক্রমার চিত্র। কীভাবে বিভিন্ন শাসনামল পেরিয়ে বাঙালি আজকের স্বাধীন বাংলাদেশে উপনীত হয়েছে সেটি ছক বন্দি করে একনজরে আমাদের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। কিন্তু এ অবস্থায় আসার ক্ষেত্রে আমরা পেরিয়েছি অনেক চড়াই উৎরাই। যার সাক্ষী ছকে উল্লেখিত শাসনামলগুলো।
‘আমার পরিচয়’ কবিতায় আমরা দেখি বাঙালির পরিচয় তুলে ধরতে গিয়ে কবি বাঙালি জাতি সত্তার উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ তুলে ধরেছেন। বাঙালিকে ঐতিহ্যমণ্ডিত জাতি হিসেবে তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছেন। বাঙালির পরিচয় তুলে ধরতে কোনো কিছুই যেন কবির দৃষ্টি এড়ায়নি। অন্যদিকে উদ্দীপকেও বাঙালি জাতিসত্তার পরিচয় তুলে ধরতে প্রাচীন আমল থেকে শুরু করে আজকের বাংলাদেশ পর্যন্ত সকল সময় ও প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়েছে। কবিতায় কবি বলেছেন বাঙালির আন্দোলন-সংগ্রাম ও স্বাধিকার চেতনার কথা। উদ্দীপকে বর্ণিত শাসনামলগুলো আমাদের সেই গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসেরই ধারক। তাই বলতে পারি, উদ্দীপকের ছকটিতে প্রকাশিত রাজনৈতিক শাসনামলের চিত্রটি ‘আমার পরিচয়’ কবিতার বাঙালি জাতিসত্তার যে রাজনৈতিক ইতিহাস প্রকাশ পেয়েছে তার সমগ্রকে ধারণ করে।
৯ম-১০ম শ্রেণিরবাংলা ১ম পত্র গাইডআমার পরিচয়কবিতাসৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
SSC Bangla 1st PaperAmar PorichoyKobitaSrijonshilQuestion-Answer৫নং সৃজনশীল প্রশ্নঃ
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস অনেক প্রাচীন। বাংলার পল্লি সাহিত্য অনেক সমৃদ্ধ। কিন্তু বর্তমানে ধীরে ধীরে এ সাহিত্য হারিয়ে যাচ্ছে। গ্রামের পালাগান, বাউল গান, জারি-সারি, ভাটিয়ালি ইত্যাদি এখন বিলুপ্তপ্রায়। আধুনিক সাহিত্যের মূলে রয়েছে পল্লি সাহিত্যের প্রেরণা।
ক. বাঙালি জাতির বীজমন্ত্র কী? ১
খ. ‘একসাথে আছি, একসাথে বাঁচি”- বলতে কী বোঝানো হয়েছে? ২
গ. উদ্দীপকের সাথে ‘আমার পরিচয়’ কবিতার বৈসাদৃশ্য চিহ্নিত করো। ৩
ঘ. উদ্দীপক ও আমার পরিচয় কবিতা একই চেতনা বহন করে- কথাটির যথার্থতা নিরূপণ করো। ৪
৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ
ক. বাঙালির বীজমন্ত্র হচ্ছে - সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।
খ. “একসাথে আছি, একসাথে বাঁচি”- বাক্যটি দ্বারা বাঙালি জাতির ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামকে বোঝানো হয়েছে।
বাঙালি সংগ্রামী জাতি। চিরকালই বাঙালি জাতি অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম করে বিজয় লাভ করেছে। সংগ্রামের মধ্য দিয়েই স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে এনেছে। একটি ঐক্যবদ্ধ জাতিকে কেউ কখনও রুখতে পারে না। বাঙালির এই সংগ্রামী চেতনা দেশপ্রেমের স্বাক্ষর বহন করে।
গ. উদ্দীপকে আমাদের সংস্কৃতির দৈন্যদশাকে নির্দেশ করা হলেও ‘আমার পরিচয়’ কবিতায় এমন কিছুর উল্লেখ নেই।
‘আমার পরিচয়’ কবিতায় স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র ও জাতিসত্তা প্রতিষ্ঠার পেছনে বাঙালির যে সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে তা-ই গুরুত্বের সাথে তুলে ধরা হয়েছে। চর্যাপদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রাম, বিদ্রোহ, ধর্ম ও সাহিত্য-সংস্কৃতি বিকাশ। রবীন্দ্র-নজরুলের কালজয়ী সৃষ্টি, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ইত্যাদি আমাদেরকে এই জায়গায় নিয়ে এসেছে। এক গৌরবের অতীত বাংলাদেশকে আজ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
উদ্দীপকে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম অনুযঙ্গ সাহিত্যের দিন দিন হারিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। যে কারণে গ্রামের পালাগান, বাউলগান, জারি-সারি, ভাটিয়ালি ইত্যাদি এখন বিলুপ্তপ্রায়। বর্তমানে যে আধুনিক সাহিত্য রচিত হচ্ছে তা মূলত পল্লি সহিত্যের প্রেরণা থেকেই। ‘আমার পরিচয়’ কবিতায় বাঙালির অতীত ও বর্তমানের মাঝে সেতুবন্ধ রচনা হয়েছে। অন্যদিকে উদ্দীপকে রয়েছে কেবল ইতিহাস ও ঐতিহ্যের বর্তমান হীন দশা।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘আমার পরিচয়’ কবিতায় বর্ণিত বাঙালির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের চেতনা ধারণ করার দিক থেকে সম্পর্কিত।
‘আমার পরিচয়’ কবিতায় সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক বাঙালি সংস্কৃতি ও সমৃদ্ধ ইতিহাস তুলে ধরেছেন। শিল্প-সাহিত্যে নিজেদের স্বকীয়তা প্রমাণ করেছেন। বাংলার প্রকৃতি আর ইতিহাসের পৃষ্ঠাগুলো নানা বৈচিত্র্যে ভরা। সেই প্রেরণায় বাংলার কবি-সাহিত্যিকরা রচনা করেছেন অসংখ্য কালজয়ী সৃষ্টি।
উদ্দীপকে বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন ইতিহাস প্রসঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। যে সাহিত্যের অন্যতম প্রধান শাখা পল্লি সহিত্য তথা মানুষের জীবনঘনিষ্ঠ পালাগান, বাউলগান, জারি-সারি, ভাটিয়ালি আলো তীক্ষ্ণ করে, শাণিত করে। এসবই মাটি ও মানুষের প্রতি ভালোবাসা থেকে সৃষ্ট। এসব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য আমাদের মাঝে জীবন বোধ সৃষ্টি করেছে। আমাদের মহিমান্বিত করেছে। ‘আমার পরিচয়’ কবিতাতে একই প্রেরণার কথা বলা হয়েছে।
‘আমার পরিচয়’ কবিতা বর্ণনায় আমরা লক্ষ করি বাঙালি জাতি বহু পথপরিক্রমা অতিক্রম করে আজকের এই অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে। মানুষের প্রতি মমত্ববোধ ও দেশপ্রেমের চেতনা তাদের সমৃদ্ধশালী ও মর্যাদাবান জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। আমাদের শিল্প-সাহিত্য চর্যাপদ, মহুয়ার পালা, কমলার দীঘি, গীতাঞ্জলি, অগ্নিবীণা ইত্যাদি তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। সেই সাংস্কৃতিক ধারাবাহিকতার অন্যতম অংশ য্ক্তু রয়েছে পল্লি সাহিত্যে । গ্রামীণ মানুষের সহজ সরল জীবন প্রেম ভালোবাসা, বিরহ-বিচ্ছেদ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে রচিত হয়েছে পল্লি সাহিত্য। এ সাহিত্যে সরাসরি মানবপ্রেম ও দেশপ্রেম থেকে উৎসারিত । ‘আমার পরিচয়’ কবিতাতে যার স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। কাজেই একথা নিশ্চতভাবেই বলা যায়, উদ্দীপক ও আমার পরিচয় কবিতা একই চেতনা বহন করে।
৯ম-১০ম শ্রেণিরবাংলা ১ম পত্র গাইডআমার পরিচয়কবিতাসৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
SSC Bangla 1st PaperAmar PorichoyKobitaSrijonshilQuestion-Answer
জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
১. ‘আমার পরিচয়’ কবিতার রচয়িতা কে?
উত্তর: ‘আমার পরিচয়’ কবিতার রচয়িতা সৈয়দ শামসুল হক।
২. সৈয়দ শামসুল হক কোন জেলায় জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর: সৈয়দ শামসুল হক কুড়িগ্রাম শহরে জন্মগ্রহণ করেন।
৩. ‘আমার পরিচয়’ কবিতার কবি কোন ভাষায় কথা বলেন?
উত্তর: ‘আমার পরিচয়’ কবিতার কবি বাংলা ভাষায় কথা বলেন।
৪. ‘আমার পরিচয়’ কবিতার কবি হাজার বছর কোথা দিয়ে চলেন?
উত্তর: ‘আমার পরিচয়’ কবিতার কবি হাজার বছর বাংলার আলপথ দিয়ে চলেন।
৫. ‘আমার পরিচয়’ কবিতায় কতটি নদীর কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: ‘আমার পরিচয়’ কবিতায় তেরোশত নদীর কথা বলা হয়েছে।
৬. ‘আমার পরিচয়’ কবিতার কবি কিসের অক্ষরগুলো থেকে এসেছেন?
উত্তর: ‘আমার পরিচয়’ কবিতার কবি চর্যাপদের অক্ষরগুলো থেকে এসেছেন।
৭. ‘আমার পরিচয়’ কবিতার কবি কার ডিঙার বহর থেকে এসেছেন?
উত্তর: ‘আমার পরিচয়’ কবিতার কবি সওদাগরের ডিঙার বহর থেকে এসেছেন।
৮. ‘আমার পরিচয়’ কবিতার কবি কাদের বিদ্রোহী গ্রাম থেকে এসেছেন?
উত্তর: ‘আমার পরিচয়’ কবিতার কবি কৈবর্তদের বিদ্রোহী গ্রাম থেকে এসেছেন।
৯. কবি কী নামে চিত্রকলার থেকে এসেছেন?
উত্তর: কবি পালযুগ নামের চিত্রকলার থেকে এসেছেন।
১০. ‘আমার পরিচয়’ কবিতার কবি কোন বৌদ্ধবিহার থেকে এসেছেন?
উত্তর: ‘আমার পরিচয়’ কবিতার কবি পাহাড়পুরের বৌদ্ধবিহার থেকে এসেছেন।
১১. ‘আমার পরিচয়’ কবিতায় বরেন্দ্রভূমের কোন স্থানের উল্লেখ রয়েছে?
উত্তর: ‘আমার পরিচয়’ কবিতায় বরেন্দ্রভূমের সোনায় মসজিদের উল্লেখ রয়েছে।
১২. ‘আমার পরিচয়’ কবিতার কবি পেছনে কী ফেলে এসেছেন?
উত্তর: ‘আমার পরিচয়’ কবিতার কবি পেছনে হাজার চরণচিহ্ন ফেলে এসেছেন।
১৩. বাঙালি জাতির বীজমন্ত্রটি কী?
উত্তর: ‘আমার পরিচয়’ কবিতায় উল্লিখিত বাঙালি জাতির বীজমন্ত্রটি হলো ‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই’।
১৪. ‘আমার পরিচয়’ কবিতায় উল্লিখিত বাংলা ভাষা ও সাহিত্য-ঐতিহ্যের প্রথম নিদর্শনটি কী?
উত্তর: ‘আমার পরিচয়’ কবিতায় উল্লিখিত বাংলা ভাষা ও সাহিত্য-ঐতিহ্যের প্রথম নিদর্শনটি হলো চর্যাপদ।
১৫. চর্যাপদের পাণ্ডুলিপি উদ্ধার করেন কে?
উত্তর: চর্যাপদের পাণ্ডুলিপি উদ্ধার করেন হরপ্রসাদ শাস্ত্রী।
১৬. কৈবর্ত বিদ্রোহের নেতার নাম কী?
উত্তর: কৈবর্ত বিদ্রোহের নেতার নাম দিব্য বা দিব্বোক।
১৭. কত খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গে পালযুগের সূচনা হয়?
উত্তর: ৭৫০ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গে পাল যুগের সূচনা হয়।
১৮. পাল বংশের রাজত্ব কত বছর টিকে ছিল?
উত্তর: পাল বংশের রাজত্ব চারশত বছর টিকে ছিল।
১৯. পাহাড়পুরের বৌদ্ধবিহার কোন জেলায় অবস্থিত?
উত্তর: পাহাড়পুরের বৌদ্ধবিহার নওগাঁ জেলায় অবস্থিত।
২০. পাহাড়পুরের বৌদ্ধবিহার আবিষ্কার করেন কে?
উত্তর: পাহাড়পুরের বৌদ্ধবিহার আবিষ্কার করেন স্যার কানিংহাম।
২১. পাহাড়পুরের বৌদ্ধবিহার কে তৈরি করেছিলেন?
উত্তর: পাহাড়পুরের বৌদ্ধবিহার দ্বিতীয় পাল রাজা শ্রী ধর্মপালদেব তৈরি করেছিলেন।
২২. ‘আমার পরিচয়’ কবিতায় উল্লিখিত কমলার দীঘি কী?
উত্তর: ‘আমার পরিচয়’ কবিতায় উল্লিখিত কমলার দীঘি হলো মৈমনসিংহ গীতিকার একটি পালা।
২৩. হাজী শরীয়তউল্লাহ কোন জেলায় জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর: হাজী শরীয়তউল্লাহ মাদারীপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন।
২৪. ক্ষুদিরাম বসু কোন জেলায় জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর: ক্ষুদিরাম বসু মেদিনীপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন।
২৫. মাস্টারদা সূর্য সেন কত সালে চট্টগ্রামকে ইংরেজমুক্ত করে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন?
উত্তর: মাস্টারদা সূর্য সেন ১৯৩০ সালে চট্টগ্রামকে ইংরেজমুক্ত করে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
২৬. বাঙালি জাতির পিতা কে?
উত্তর: বাঙালি জাতির পিতা হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
২৭. সৈয়দ শামসুল হকের কোন গ্রন্থ থেকে ‘আমার পরিচয়’ শীর্ষক কবিতাটি চয়ন করা হয়েছে?
উত্তর: সৈয়দ শামসুল হকের ‘কিশোর কবিতা সমগ্র’ থেকে ‘আমার পরিচয়’ শীর্ষক কবিতাটি চয়ন করা হয়েছে।
৯ম-১০ম শ্রেণিরবাংলা ১ম পত্র গাইডআমার পরিচয়কবিতাসৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
SSC Bangla 1st PaperAmar PorichoyKobitaSrijonshilQuestion-Answer
অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
১. বাঙালি কীভাবে বর্তমান অবস্থানে এসেছে? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: সমৃদ্ধ ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারাবাহিকতায় বাঙালি বর্তমান অবস্থানে এসেছে।
আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন বাঙালি জাতির স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র ও জাতিসত্তা প্রতিষ্ঠার পেছনে আছে এক সমৃদ্ধ ইতিহাস। সহজিয়াপন্থি বৌদ্ধ কবিদের সৃষ্ট চর্যাপদের মধ্যে বাঙালি জাতিসত্তার অসাম্প্রদায়িক জীবনবোধের পরিচয় মুদ্রিত হয়ে আছে। সেই অসাম্প্রদায়িক চেতনার আলোকে বাঙালিরা যুগে যুগে নানা চড়াই-উৎরাই পার করেছে। এর ফলে নানা আন্দোলন, বিপ্লব-বিদ্রোহ আর মতাদর্শের বিকাশ হতে হতে বাঙালি পৌঁছেছে বর্তমান অবস্থানে।
২. কবি চর্যাপদের অক্ষরগুলো থেকে এসেছেন কীভাবে?
উত্তর: চর্যাপদে যে অসাম্প্রদায়িক জীবনবোধের পরিচয় মুদ্রিত হয়েছে তার ধারাবাহিকতায় কবিও এই বাংলায় এসেছেন।
বাঙালি জাতি অসাম্প্রদায়িক এবং স্বাধীন ও সার্বভৌম। কবিও এই বাঙালি জাতিরই একজন। তিনি অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে বুকে লালন করেন। আর এই চেতনা এসেছে চর্যাপদের অক্ষরগুলো থেকে। চর্যাপদের অক্ষরগুলোতে অসাম্প্রদায়িক বাঙালির বীজ নিহিত ছিল। এই চেতনার ধারাবাহিকতা থেকে কবি এসেছেন।
৩. বাঙালি জাতিসত্তা সৃষ্টিতে চর্যাপদের ভূমিকা কেমন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: চর্যাপদ অসাম্প্রদায়িকতার বীজ বপনের মাধ্যমে বাঙালি জাতিসত্তা সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখেছে।
বাঙালি একটি অসাম্প্রদায়িক জাতি। এদেশে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সবাই একই জাতিসত্তার চেতনায় বিশ্বাসী। আর তা হলো বাঙালি জাতিসত্তা। আর এই জাতিসত্তার বীজ রোপিত হয়েছিল চর্যাপদের মধ্যে। সহজিয়াপন্থী বৌদ্ধ কবিগণ চর্যাপদে বাঙালি জাতিসত্তার অসাম্প্রদায়িক জীবনবোধের পরিচয় তুলে ধরেছেন। তাই বাঙালি জাতিসত্তা সৃষ্টিতে এই চর্যাপদের ভূমিকা অপরিসীম।
৪. ‘আমার পরিচয়’ কবিতায় কবি কৈবর্ত বিদ্রোহের উল্লেখ করেছেন কেন?
উত্তর: ‘আমার পরিচয়’ কবিতায় কবি বাঙালি জাতির বিদ্রোহের ইতিহাস বোঝাতে কৈবর্ত বিদ্রোহের উল্লেখ করেছেন।
বাঙালি জাতি সংগ্রামী জাতি। তারা যুগ যুগ ধরে অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে। জীবন বাজি রেখে অন্যায়কে রুখে দিয়েছে ঐক্যবদ্ধভাবে। শাসকদলের শোষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে। বাঙালির এই বিদ্রোহের ঐতিহ্যকে ধারণ করে আছে কৈবর্ত বিদ্রোহ। তাই কবি ‘আমার পরিচয়’ কবিতায় এই কৈবর্ত বিদ্রোহের উল্লেখ করেছেন।
৫. ‘আমার পরিচয়’ কবিতায় কবি পাহাড়পুরের বৌদ্ধবিহারের উল্লেখ করেছেন কেন?
উত্তর: ‘আমার পরিচয়’ কবিতায় কবি পাহাড়পুরের বৌদ্ধবিহারের উল্লেখ করে বাঙালির প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্যের কথা বোঝাতে চেয়েছেন।
বাঙালি জাতির রয়েছে এক সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। যুগে যুগে বাংলার রাজারাজড়ারা বিভিন্ন ঐতিহাসিক নিদর্শন স্থাপন করে গেছেন। এসব প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন কালের সাক্ষী হয়ে বাঙালির ঐতিহ্যকে ধারণ করে আছে। আর বাঙালির এই ঐতিহ্য বোঝাতেই ‘আমার পরিচয়’ কবিতায় কবি পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের উল্লেখ করেছেন।
৬. ‘আমার পরিচয়’ কবিতায় কবি পালযুগের চিত্রকলার উল্লেখ করেছেন কেন?
উত্তর: ‘আমার পরিচয়’ কবিতায় কবি বাঙালির শিল্পের সমৃদ্ধ ইতিহাস বোঝাতে পালযুগের চিত্রকলার উল্লেখ করেছেন।
প্রাচীনকালে বাংলায় পালযুগের প্রায় চারশত বছরের ইতিহাসে শিল্প-সাহিত্যের অসামান্য বিকাশ সাধিত হয়। চিত্রকলায়ও এই সময়ের সমৃদ্ধি অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য। সেই সময়ে নির্মিত বিভিন্ন স্থাপত্য নিদর্শনে চিত্রকলায় পাল আমলের কৃতিত্বের স্বাক্ষর রয়েছে। সেই চিত্রকলা বাঙালির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। কবি ‘আমার পরিচয়’ কবিতায় পাল আমলের এই সমৃদ্ধ ইতিহাসকে তুলে ধরতেই পাল আমলের চিত্রকলার উল্লেখ করেছেন।
৭. ‘আমার পরিচয়’ কবিতায় উল্লিখিত সূর্য সেন কীভাবে বাঙালি জাতিসত্তার সাথে সম্পৃক্ত?
উত্তর: ‘আমার পরিচয়’ কবিতায় উল্লিখিত সূর্য সেন বিদেশি অপশক্তির শোষণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বাঙালি জাতির চিরন্তন ঐতিহ্যকে ধারণ করায় তিনি বাঙালি জাতিসত্তার সাথে সম্পৃক্ত।
বাঙালি জাতির রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল, সংগ্রামী ইতিহাস। তারা যুগে যুগে বিভিন্ন অপশক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। মাস্টারদা সূর্য সেন বাঙালি চেতনা বুকে ধারণ করা তেমনই এক বাঙালি। তিনি ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন এবং চট্টগ্রামকে স্বাধীন করার ঘোষণা দেন। তাঁর এই কর্মকাণ্ড বাঙালির চিরন্তন মুক্তির আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটে। এভাবেই তিনি বাঙালি জাতিসত্তার সাথে সম্পৃক্ত।
৮. ‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই’ কেন?
উত্তর: মানুষ তার জ্ঞান, মেধা ও প্রজ্ঞা দিয়ে অপরের কল্যাণ সাধন করতে পারে বিধায় ‘সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই’ বলা হয়েছে।
প্রতিটি মানুষের মাঝেই বুদ্ধি-বিবেক রয়েছে। বুদ্ধিমান ও বিবেকবান মানুষ নিজের সক্ষমতা দিয়ে অপরের মঙ্গল করার ক্ষমতা রাখে। যুগে যুগে সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়েছে এই মানুষই। মানুষে মানুষে সম্প্রীতিই জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। এজন্য বলা হয়, সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।
0 Comments:
Post a Comment